ভৈরবে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে টর্চলাইট জ্বালিয়ে সংঘর্ষ, আহত অন্তত ২০

জয়নাল আবেদীন রিটন, ভৈরব প্রতিনিধি ॥

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পরও উভয় পক্ষ টর্চলাইট জ্বালিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষ চালিয়ে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এ সহিংস ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।

গতকাল সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের লুন্দিয়া গ্রামে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে মোল্লা বাড়ির পক্ষের ১১ জনকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। গুরুতর আহত ফয়সাল মোল্লা (৩৭) নামের একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অপর পক্ষের আহতরা পুলিশের আশঙ্কায় কুলিয়ারচরসহ বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেওয়া আহতদের মধ্যে রয়েছেন—তামজিদ মোল্লা (১৬), রাজু মোল্লা (২২), বাবু মিয়া (২৫), বশির মিয়া (৫৫), ফয়সাল মোল্লা (৩৭), সাইফুল (২২), শফিকুল ইসলাম (১৬), হজরত আলী (৪০), আব্দুর রহমান (১৬), ফখর উদ্দিন (১৬) ও শোয়েব (৩৬)।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই আগানগর ইউনিয়নের লুন্দিয়া গ্রামের মোল্লা বাড়ি ও শেখ বাড়ির মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার বিকালে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায় এবং একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। সংঘর্ষে মোল্লা বাড়ির নেতৃত্ব দেন ইউপি সদস্য হারুন মিয়া ও মুর্শিদ মিয়া। অপরদিকে শেখ বাড়ির নেতৃত্বে ছিলেন মাইন উদ্দিন মিয়া ও দিলু মিয়া।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, এর আগে ৭ ডিসেম্বর আগানগর ইউনিয়নের টুক চানপুর গ্রামে একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহতদের সহায়তা দেওয়াকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। একই সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কিছু নেতাকর্মীর চলাফেরা নিয়েও পক্ষগুলোর মধ্যে সন্দেহ ও ক্ষোভ তৈরি হয়। ওই দিনের সংঘর্ষে মোল্লা বাড়ির নিজাম (৪২) ও তার ছেলে তামিম (২২) আহত হন। এ ঘটনার পর থেকেই এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

সোমবার বিকালে উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে সহিংসতায়। উভয় পক্ষ দা, বল্লম, লাঠি ও ইট-পাটকেলসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পরস্পরের ওপর হামলায় লিপ্ত হয়। সন্ধ্যা নেমে আসলেও সংঘর্ষ থামেনি। অন্ধকারে টর্চলাইট জ্বালিয়ে প্রায় রাত ৭টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলতে থাকে, যা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।

মোল্লা বাড়ির সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, টুক চানপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আহতদের দেখতে যাওয়াকে কেন্দ্র করেই মূলত বিরোধের সূত্রপাত হয়। তিনি দাবি করেন, তাদের সঙ্গে থাকা মোটরসাইকেল চালকরা আওয়ামী লীগের সমর্থক হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের বিএনপি নেতাদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা তৈরি হয়। পরে সেই বিরোধ সংঘর্ষে রূপ নেয়। তার দাবি, এ ঘটনায় তাদের পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।

অন্যদিকে শেখ বাড়ির গোলাপ মিয়া পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, মোল্লা বাড়ির কিছু বিএনপি নেতা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আঁতাত করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলতেই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। তিনি জানান, তাদের পক্ষেরও প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছেন।

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক উম্মে হাবীবা জুঁই জানান, বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সংঘর্ষে আহত ১১ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতাউর রহমান আকন্দ বলেন, সংঘর্ষের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশের দুটি টিম পাঠানো হয়। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঘটনার পর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post