ভৈরবে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে নারী-পুরুষসহ পাঁচজন আটক

ভৈরব প্রতিনিধি: জয়নাল আবেদীন রিটন
কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর এলাকার পঞ্চবটি নতুন রাস্তার একটি ভাড়া বাসা থেকে অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তিন নারী ও দুই যুবককে আটক করেছে এলাকাবাসী ও স্থানীয় একটি মাদকবিরোধী সংগঠন। পরে তাদেরকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।

গত ২৭ জুন, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাটি ঘটে সৌদি প্রবাসী আরমান মিয়ার ভাড়া করা ওই বাড়িতে। আটক ব্যক্তিরা হলেন—নতুন রাস্তার রায়হান মিয়ার স্ত্রী পারুল (২০), কলাবাগানের শাহিন মিয়ার স্ত্রী রিমি বেগম (২২), দেহ ব্যবসার মূল হোতা হিসেবে পরিচিত নতুন রাস্তার রতন মিয়ার স্ত্রী নেহার বেগম (৩৮), চন্ডিবেড় এলাকার পিন্টু মিয়ার ছেলে সোহান মিয়া (২২) এবং তার এক অজ্ঞাতনামা বন্ধু।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ওই বাড়িতে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে। স্থানীয়রা জানান, নেহার বেগম বিভিন্ন এলাকা থেকে পুরুষ ও নারীদের এনে ওই বাসায় অবৈধ কার্যকলাপ পরিচালনা করে আসছিলেন। শুধু অসামাজিক কাজ নয়, সেখানে মাদক সেবনের ব্যবস্থাও ছিল। প্রতিবেশীরা বহুবার বাড়ির কেয়ারটেকার আনোয়ার হোসেনকে বিষয়টি জানালেও তিনি কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

এ বিষয়ে মাদকবিরোধী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমাদের চেষ্টা’র সভাপতি ওমর মোহাম্মদ অপু বলেন, “আমরা বেশ কিছুদিন ধরে ওই বাড়িটি নজরদারির আওতায় রেখেছিলাম। শুক্রবার রাতে আমরা নিশ্চিত হই সেখানে অসামাজিক কর্মকাণ্ড চলছে। সংগঠনের সদস্য ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আমরা অভিযানে যাই এবং পাঁচজনকে হাতেনাতে আটক করি। তাদের কাছ থেকে মাদক সেবনের সরঞ্জাম এবং দুই প্যাকেট কনডম জব্দ করা হয়েছে।”

পরে খবর পেয়ে শহর ফাঁড়ির এটিএসআই মজনু মিয়া সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং আটককৃতদের থানায় নিয়ে যান। তিনি বলেন, “আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ২৯০ ধারায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং তাদের আদালতে পাঠানো হবে।”

আটক নারীরা পুলিশের কাছে দাবি করেন, তারা সবাই স্বামী পরিত্যক্তা এবং জীবিকার তাগিদেই এ ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। এ সময় তারা জানান, পাশের বাড়ির এক ব্যক্তি নিয়মিতভাবে তাদের খদ্দের জোগাড় করে দিতেন।

এদিকে, বাড়ির কেয়ারটেকার আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছিলেন, তবে উপযুক্ত প্রমাণ না থাকায় তাদের বাসা ছাড়ার নির্দেশ দেননি। তবে এখন পরিস্থিতি স্পষ্ট হওয়ায় তিনি জানান, তাদের আর ওই বাসায় থাকতে দেওয়া হবে না।

স্থানীয়রা বলছেন, এলাকাটিতে দিনদিন অপরাধের মাত্রা বাড়ছে এবং প্রশাসনের পাশাপাশি সচেতন নাগরিকদেরও এ বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা নেওয়া উচিত। তারা মাদক ও অসামাজিক কার্যকলাপ রোধে আরও জোরালো পদক্ষেপ কামনা করছেন।

এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ এটিকে সমাজ সচেতনতামূলক উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভৈরবের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং মাদক-দেহব্যবসার মতো অপরাধ দমনে স্থানীয় জনগণের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।#ভৈরব #অসামাজিক_কার্যক্রম #মাদকবিরোধী #পুলিশ_অভিযান #বাংলাদেশ_সংবাদ

Post a Comment

Previous Post Next Post