ওসমান হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে ভৈরবে ছাত্রসমাজের বিক্ষোভ সভা

জয়নাল আবেদীন রিটন, ভৈরব প্রতিনিধি ॥

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বিক্ষোভ সভা করেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও ছাত্রসমাজ। হামলার ঘটনায় দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আয়োজিত এ বিক্ষোভ সভা গতকাল শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় ভৈরব পৌর শহীদ মিনার চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়।

বিক্ষোভ সভায় ভৈরবসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। সভায় ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ছাত্রনেতা জাহিদুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম শাহরিয়ার, হান্নান আহমেদ হিমু, রাকিব আহমেদ, সরফরাজ আহমেদ সজিবসহ আরও অনেকে। বক্তারা হামলার ঘটনাকে দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত বলে উল্লেখ করেন।

বক্তারা বলেন, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঢাকা পল্টনের মতো স্থানে প্রকাশ্য দিবালোকে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির ওপর গুলি চালানোর ঘটনা অত্যন্ত ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক। একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এমন ন্যাক্কারজনক হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অথচ ঘটনার পর এতদিন পার হয়ে গেলেও সরকার এখনো হামলাকারীদের শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করতে পারেনি, যা জনমনে চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

বিক্ষোভ সভায় বক্তারা সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, একের পর এক রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলেও এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।

তারা আরও বলেন, কিছুদিন আগেও গণঅধিকার পরিষদের শীর্ষ নেতা নুরুল হক নুরের ওপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায়ও আজ পর্যন্ত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হয়নি। বারবার এমন ঘটনা প্রমাণ করে, দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা রোধে সরকারের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ।

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি চিহ্নিত মহল পরিকল্পিতভাবে এসব হামলা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের দোসররা নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখাতে ও দমন করতে এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

বিক্ষোভ সভা থেকে ছাত্রনেতারা সরকারকে ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি ওসমান হাদির ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে ভৈরবসহ সারা দেশে ছাত্রসমাজ আরও কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে। প্রয়োজনে রাজপথে থেকে গণআন্দোলন গড়ে তোলারও হুঁশিয়ারি দেন তারা।

বক্তারা দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধারা জীবিত থাকতে কোনো ষড়যন্ত্রই দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না। ছাত্রসমাজ সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে বলে তারা প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

বিক্ষোভ সভায় ওসমান হাদির দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয় এবং হামলায় আহত শরীফ ওসমান বিন হাদির সুস্থতার জন্য বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া ও সংক্ষিপ্ত সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন ছাত্রসমাজের নেতৃবৃন্দ।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার, নিরপেক্ষ তদন্ত এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান।

Post a Comment

Previous Post Next Post