জয়নাল আবেদীন রিটন, ভৈরব প্রতিনিধি ॥
শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে অসাধারণ সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে কৃতিত্ব অর্জনকারী শিশু-কিশোরদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ভৈরবের গর্বিত সন্তানদের সম্মাননা জানানো হয়।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকাল ৪টায় ভৈরব পৌরসভার সেমিনার কক্ষে ভৈরব উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এবং দৈনিক পূর্বকণ্ঠ পত্রিকার সহযোগিতায় এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, অভিভাবক, সংস্কৃতিকর্মী ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভৈরব উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ.এইচ.এম. আজিমুল হক। প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশোর কুমার ধর, শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট শিশু সংগঠক অধ্যক্ষ শরীফ আহমেদ, ভৈরব প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ মোস্তাফিজ আমিন, প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সোহেলুর রহমান, ভৈরব রিপোর্টার্স ক্লাব ও ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আলাল উদ্দিন, বাংলা ভিশন টেলিভিশন ও দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার ভৈরব প্রতিনিধি সত্যজিৎ দাস ধ্রুব এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সংস্কৃতিকর্মী মোস্তফা কামাল।
অনুষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও সঞ্চালনায় ছিলেন ভৈরব উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির আবৃত্তি প্রশিক্ষক ফারহানা বেগম লিপি। তার প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় পুরো অনুষ্ঠানটি সুশৃঙ্খল ও আনন্দঘন পরিবেশে সম্পন্ন হয়।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, একটি শিশু বা কিশোরের জাতীয় কিংবা বিভাগীয় পর্যায়ে পৌঁছানো সহজ কোনো পথ নয়। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘদিনের অধ্যবসায়, নিয়মিত চর্চা, পারিবারিক সহায়তা এবং প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতা। শুরুতে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ধাপে ধাপে বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পৌঁছাতে হয়। এই প্রতিটি ধাপেই থাকে কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস ও আত্মত্যাগের গল্প।
বক্তারা আরও বলেন, ভৈরবের শিশু-কিশোররা শুধু লেখাপড়াতেই নয়, আবৃত্তি, সংগীত, গল্প বলা ও উপস্থিত বক্তৃতার মতো শিল্প-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে জাতীয় অঙ্গনে ভৈরবকে পরিচিত করে তুলেছে। তাদের এই সাফল্য পুরো ভৈরববাসীর জন্য গর্বের এবং অনুপ্রেরণার।
সভাপতির বক্তব্যে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ.এইচ.এম. আজিমুল হক বলেন, “শিশু-কিশোরদের প্রতিভা বিকাশে সাংস্কৃতিক চর্চার কোনো বিকল্প নেই। শিল্পকলা একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও আয়োজনের মাধ্যমে শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা ভৈরব শিল্পকলা একাডেমিসহ স্থানীয় সকল সাংস্কৃতিক সংগঠনকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। তারা শিশু-কিশোরদের জাতীয় পর্যায়ে পৌঁছাতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতার আশ্বাস দেন এবং অভিভাবকদের সচেতন ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আলোচনা সভা শেষে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে সাফল্য অর্জনকারী শিশু-কিশোরদের হাতে সম্মাননা স্মারক ও পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। ‘নতুন কুড়ি-২০২৫’ প্রতিযোগিতায় গল্প বলায় জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় স্থান অর্জনের জন্য নুসরাত তাসনিমকে সংবর্ধিত করা হয়। বিভাগীয় পর্যায়ে উপস্থিত বক্তৃতায় তৃতীয় স্থান অর্জন করায় সামিয়া পাঠান নুহাতকে পুরস্কৃত করা হয়।
এছাড়াও আবৃত্তিতে একুশে পদক অর্জন করে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করায় আরশিয়া রহমানকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। বিভাগীয় পর্যায়ে ইয়েস কার্ড অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে দেশাত্মবোধক সংগীতে শ্রুতি আচার্য, আবৃত্তিতে সুবহানুল এস আলম, সাদমীন জাহান ও মুক্তাদির রহমানকে সম্মাননা ও পুরস্কার প্রদান করা হয়।
পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশু-কিশোরদের মুখে ছিল আনন্দ ও গর্বের ছাপ। অভিভাবকরা জানান, এ ধরনের সংবর্ধনা শিশুদের আরও উৎসাহিত করে এবং ভবিষ্যতে বড় মঞ্চে অংশগ্রহণের অনুপ্রেরণা জোগায়।
অনুষ্ঠানটি ভৈরবের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Post a Comment