জয়নাল আবেদীন রিটন, ভৈরব প্রতিনিধি ॥
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মাদকবিরোধী অভিযানে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেট পাচারের অভিযোগে আপন দুই বোনকে আটক করেছে ডিএনসি ভৈরব কার্যালয়ের সদস্যরা। উদ্ধারকৃত ইয়াবার সংখ্যা ৮ হাজার ৫৮০ পিস, যা সাম্প্রতিক সময়ে ভৈরব উপজেলায় অন্যতম বড় চালান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে ভৈরব উপজেলার নাটালের মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফয়জুরি আক্তার পলি (২৯) ও শিউলি বেগম (৩৮) নামে দুই নারীকে আটক করা হয়। আটককৃতরা পরস্পর আপন বোন বলে নিশ্চিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ভৈরব কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কর্মকর্তারা আগে থেকেই জানতে পারেন যে, একটি সংঘবদ্ধ মাদকচক্রের দুই নারী সদস্য লেগুনাযোগে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা নিয়ে ভৈরবে প্রবেশ করতে পারে। তথ্যের সত্যতা যাচাই শেষে ডিএনসির একটি বিশেষ টিম কৌশলগতভাবে নাটালের মোড় এলাকায় অবস্থান নেয়।
ডিএনসি ভৈরব কার্যালয়ের পরিদর্শক চন্দন গোপাল সুর জানান, পূর্বনির্ধারিত তথ্য অনুযায়ী সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু সংলগ্ন নাটালের মোড় এলাকায় লেগুনাটি পৌঁছালে সেটি থামিয়ে সন্দেহভাজন দুই নারীকে শনাক্ত করা হয়। পরে নারী কনস্টেবলের মাধ্যমে তাদের দেহ তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশিকালে তাদের হেফাজতে থাকা ব্যাগ ও কাপড়ের ভেতর থেকে ৮ হাজার ৫৮০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, উদ্ধারকৃত ইয়াবা জব্দ করার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত নারীরা স্বীকার করেন যে, তারা দীর্ঘদিন ধরে মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত এবং একটি সংঘবদ্ধ চক্রের হয়ে কাজ করছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আটক দুই বোনের পরিচয় সম্পর্কে জানা গেছে, তারা মাদারীপুর জেলার শিবচর থানাধীন চরবহেরাতলা গ্রামের বাসিন্দা। তাদের পিতা মৃত মজিবুর ফরাজি। শিউলি বেগম নুরুজ্জামানের স্ত্রী এবং ফয়জুরি আক্তার পলি মনুজ মিয়ার স্ত্রী। বর্তমানে তারা ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানাধীন বন্ধ মান্দাইল এলাকার আমির হাজির বস্তিতে বসবাস করছিলেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, আটক দুই বোনের বিরুদ্ধে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় মাদক পরিবহন ও সরবরাহের অভিযোগ আগেও ছিল। তারা মূলত নারীদের ব্যবহার করে ইয়াবা বহনের কৌশল গ্রহণ করত, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়া যায়। তবে সাম্প্রতিক গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার হওয়ায় এবার তারা ধরা পড়ে।
পরিদর্শক চন্দন গোপাল সুর বলেন, “ভৈরবকে মাদকমুক্ত রাখতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যারা সমাজ ধ্বংসকারী এই মাদকের সঙ্গে জড়িত, তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আদালতের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে।”
স্থানীয়রা জানান, নাটালের মোড় ও আশপাশের এলাকা দিয়ে নিয়মিত বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করায় এটি মাদক পাচারকারীদের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সুবিধাজনক রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। এ ঘটনায় এলাকাবাসী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হলে মাদকের বিস্তার অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।
ভৈরব থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ডিএনসি কর্তৃক দায়ের করা মামলায় আটক দুই নারীকে ভৈরব থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাদের আদালতে হাজির করে জেল হাজতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। একই সঙ্গে উদ্ধারকৃত ইয়াবার উৎস, গন্তব্য এবং এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সদস্যদের শনাক্তে তদন্ত কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
মাদকবিরোধী এই অভিযানের মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে, ভৈরব উপজেলায় মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর অবস্থান অব্যাহত রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান আরও জোরদার করা হবে।
Post a Comment