জয়নাল আবেদীন রিটন, ভৈরব প্রতিনিধি ॥
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বীরসেনা শরিফ ওসমান হাদীর ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মশাল মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ভৈরব উপজেলা শাখা। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাতটার দিকে ভৈরব পৌর শহরের এনসিপি কার্যালয় থেকে মশাল মিছিলটি শুরু হয়।
মশাল মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে দুর্জয় চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল চলাকালে অংশগ্রহণকারীরা “হাদীর ওপর হামলার বিচার চাই”, “সন্ত্রাসীদের ঠিকানা বাংলার মাটিতে হবে”, “নতুন বাংলাদেশে সন্ত্রাসের ঠাঁই নেই”—এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, বাংলার মানুষ এখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শিখেছে। ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ দেশের অসংখ্য প্রতিবাদী তরুণকে হত্যা করা হয়েছে কিংবা হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম বীরসেনা শরিফ ওসমান হাদীর ওপর গুলি চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে, যা জাতির জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও লজ্জাজনক ঘটনা।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, দেশে এখনো স্বৈরাচারী মানসিকতা ও সন্ত্রাসী রাজনীতি পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ ও রাজনীতি করার পরিবেশ আজও নিরাপদ নয়। প্রকাশ্য দিবালোকে রাজধানীতে একজন তরুণ রাজনৈতিক নেতার ওপর গুলি চালানোর ঘটনা প্রমাণ করে, দেশের মানুষ এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
তারা আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সৈনিকরা কখনো বুলেটকে ভয় পায় না। শরিফ ওসমান হাদীকে হত্যা করলেও এ দেশের প্রতিবাদী কণ্ঠ স্তব্ধ করা যাবে না। নতুন বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে একজন করে হাদী জন্ম নিচ্ছে। একজন হাদীকে হত্যা করে গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধ্বংস করা সম্ভব নয়।
বক্তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। কোনো রাজনৈতিক পরিচয় কিংবা প্রভাবশালী মহলের চাপে যেন তদন্ত প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়েও সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। অন্যথায় জনগণের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়বে এবং রাজপথে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।
প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল হক জয়। তিনি বলেন, “দেশকে নতুন পথে এগিয়ে নিতে গেলে সন্ত্রাস ও সহিংসতার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। হাদীর ওপর হামলা শুধু একজন ব্যক্তির ওপর হামলা নয়, এটি গণঅভ্যুত্থানের চেতনার ওপর আঘাত।”
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কুলিয়ারচর উপজেলা প্রধান সমন্বয়কারী মাহবুব রহমান, আশুগঞ্জ উপজেলা নেতা ইঞ্জিনিয়ার ডালিম, বাজিতপুর উপজেলা মুখপাত্র জারিফ রহমান আজাদ, কিশোরগঞ্জ জেলা যুবশক্তির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মানিক মিয়া এবং এনসিপি ভৈরব উপজেলা প্রতিনিধি রিসান কবির।
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন ইফতি সিকদার শাহরুখসহ এনসিপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। এছাড়া মোহাম্মদ সোহেল, আশিক, আশরাফুল ইসলাম, বাপ্পি মজুমদার, আবির, নিলয়সহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা মশাল মিছিল ও সভায় অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাবেক নেতা এবং তরুণ রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে পরিচিত শরিফ ওসমান হাদী ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র। তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। গত ১২ ডিসেম্বর শুক্রবার দুর্বৃত্তরা চলন্ত রিকশায় থাকা অবস্থায় তাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যেখানে তিনি বর্তমানে আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
শেষে বক্তারা হাদীর দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং সন্ত্রাসমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি সমাপ্ত করেন।
Post a Comment