জয়নাল আবেদীন রিটন, ভৈরব প্রতিনিধি ॥
ভৈরবকে পৃথক জেলা ঘোষণার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে কিশোরগঞ্জের ভৈরব। দাবির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের অংশ হিসেবে বুধবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে স্থানীয় ছাত্র–জনতা চলন্ত ট্রেন থামিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে ভৈরব রেলস্টেশনের অদূরে সম্ভুপুর রেলগেট এলাকায় শতাধিক মানুষ রেললাইনে অবস্থান নিয়ে লাল কাপড় টানিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেয়।
রেললাইনে লাল কাপড় টেনে ট্রেন থামানো
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১টা ২১ মিনিটে নাছিরনাবাদগামী ট্রেনটি ভৈরব স্টেশনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। হঠাৎ চালক লক্ষ্য করেন, রেললাইনের ওপর লাল কাপড় টানানো এবং চারপাশে ভিড় জমেছে। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ট্রেন থামিয়ে দেন।
এসময় বিক্ষোভকারীরা ‘ভৈরবকে জেলা চাই’, ‘কিশোরগঞ্জ থেকে আলাদা প্রশাসন চাই’—এমন বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ভৈরব থানা পুলিশ। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলেও পুলিশের সঙ্গে আলোচনায় শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা বলেন, “ভৈরব দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও শিল্পনগরী। এখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও জনসংখ্যার বিবেচনায় জেলা হওয়ার যথেষ্ট যোগ্যতা রয়েছে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দাবি উপেক্ষা করা হচ্ছে।”
১৫ মিনিট বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল
ভৈরব রেলস্টেশন মাস্টার আবু ইউসুফ বলেন, “রেললাইন অবরোধের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিক্ষোভকারীরা প্রায় ১৫ মিনিট পর নিজেরাই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করেন। ট্রেন বা যাত্রীদের কোনো ক্ষতি হয়নি।”
তিনি আরও জানান, ট্রেনটি সামান্য বিলম্বে পুনরায় গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়।
বিক্ষোভে ছাত্র–যুবসমাজের অংশগ্রহণ
অবরোধ ও বিক্ষোভে স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, শ্রমজীবী মানুষসহ সাধারণ জনতা অংশ নেন। তাদের হাতে ছিল ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড, যাতে লেখা ছিল—“ভৈরবের মানুষের ন্যায্য দাবি, জেলা চাই এখনই”, “শিল্পনগর ভৈরবকে বঞ্চিত রাখা চলবে না।”
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, “ভৈরব কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত হলেও প্রশাসনিক দিক থেকে অনেক সময় সেবা পাওয়া যায় না। প্রতিটি সরকারি কাজের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর যেতে হয়, যা সময় ও খরচ দুই-ই বাড়ায়।”
প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্ত ঘিরে অসন্তোষ
সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে কিশোরগঞ্জ জেলা ময়মনসিংহ বিভাগে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকেই ভৈরবসহ আশপাশের এলাকায় অসন্তোষ দেখা দেয়। ভৈরববাসীর দাবি—ঢাকা বিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা অবস্থায় ভৈরবের যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষা কার্যক্রম আরও সহজ ছিল। এখন ময়মনসিংহে যুক্ত হলে প্রশাসনিক জটিলতা ও সময়ক্ষেপণ বাড়বে।
একজন বিক্ষোভকারী বলেন, “ভৈরব অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর একটি এলাকা। এখানে শিল্প কারখানা, নদীবন্দর, রেল ও সড়ক যোগাযোগের সুবিধা—সবই আছে। তাই আলাদা জেলা গঠন করা এখন সময়ের দাবি।”
প্রশাসনের অবস্থান
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলে কোনো ধরনের সংঘাত বা সহিংসতা ঘটেনি। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
ভৈরব থানার এক কর্মকর্তা বলেন, “ছাত্র ও স্থানীয় জনগণ তাদের দাবি শান্তিপূর্ণভাবে প্রকাশ করেছে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ভবিষ্যতেও আন্দোলন সাংবিধানিক ও অহিংস পথে চালিয়ে যাবেন।”
এলাকার সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
ভৈরবের ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও সাধারণ নাগরিকদের একাংশ মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরে ভৈরবকে জেলা করার দাবি উপেক্ষিত থাকায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তারা বলেন, “ভৈরবের ভূগোল, জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় আলাদা জেলা করা সময়োপযোগী হবে।”
পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা
বিক্ষোভ শেষে আয়োজকরা জানান, তাদের এই আন্দোলন চলমান থাকবে। শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। তারা সরকারের কাছে দ্রুত ভৈরবকে জেলা ঘোষণার দাবি জানান।
Post a Comment