জয়নাল আবেদীন রিটন, ভৈরব প্রতিনিধি ॥
“পথ যেন হয় শান্তির, মৃত্যুর নয়”—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে উদযাপিত হলো জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২৫। দিবসটি উপলক্ষে সামাজিক সংগঠন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা) ভৈরব শাখার আয়োজনে এক প্রাণবন্ত বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় ভৈরব চণ্ডিবের ব্লু-বার্ড স্কুলের মুক্ত মঞ্চে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতা ছিল মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ।
আট প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে শুরু হয় প্রতিযোগিতা
বিতর্ক প্রতিযোগিতার প্রথম রাউন্ডে অংশ নেয় এলাকার আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—জামালপুর টেকনিক্যাল উচ্চ বিদ্যালয়, ভৈরব পৌর পাইলট গার্লস হাই স্কুল, যোগেন্দ্র চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়, ভৈরব আইডিয়াল স্কুল, কালীপুর হাই স্কুল, গাজীপুর শাহীন ক্যাডেট একাডেমি ও এমবিশন পাবলিক স্কুল।
প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা যুক্তি, বিশ্লেষণ ও উপসংহারের মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা, ট্রাফিক আইন মানার গুরুত্ব এবং দুর্ঘটনা রোধে জনসচেতনতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। উপস্থিত দর্শক ও বিচারকদের সামনে তরুণ বক্তারা যে পরিপক্ব যুক্তি উপস্থাপন করেন, তা অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার প্রশংসা কুড়ায়।
বিচারকদের প্রশংসা
প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ভৈরব প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক মো. মোস্তাফিজুর রহমান আমিন, দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক মো. সুমন মোল্লা, ভৈরব সরকারি হাজী আসমত কলেজের প্রভাষক মো. সেলিম মিয়া, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জলি বদন তৈয়বা, উদয়ন স্কুলের নির্বাহী পরিচালক মো. মতিউর রহমান সাগর এবং রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের প্রভাষক নিলুফা ইয়াসমিন।
বিচারক মণ্ডলী অংশগ্রহণকারীদের বক্তৃতার বিষয়বস্তু, বিশ্লেষণ, উপসংহার, ভাষার সাবলীলতা ও উপস্থাপনশৈলীর ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করেন। প্রথম রাউন্ড শেষে শ্রেষ্ঠ চারটি বিদ্যালয়কে সেমিফাইনাল পর্বের জন্য নির্বাচিত করা হয়।
সভাপতিত্ব করেন আলাল উদ্দিন
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন নিসচা ভৈরব শাখার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কার্যকরী সদস্য মো. আলাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, “আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের চালক, পথচারী ও নাগরিক। সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক সচেতনতা তাদের মধ্য থেকেই ছড়িয়ে দিতে হবে। একমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই নিরাপদ চলাচলের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।”
সঞ্চালনায় শিক্ষার্থীরা
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নিসচা সদস্য আফছানা নাজনীন প্রিয়া ও বিতর্ক উপকমিটির সচিব সুমাইয়া হামিদ দিয়া। সময় নিয়ন্ত্রণে ছিলেন তাসলিমা খাতুন লিছা। সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন দেলোয়ার হোসেন সুজন, শাহ আলম জনি ও জাকির হোসেন বিএসসি।
বক্তাদের আহ্বান
বক্তারা বলেন, “প্রতিদিন দেশের সড়কে অসংখ্য প্রাণ ঝরে পড়ছে। এসব দুর্ঘটনার বড় একটি কারণ সচেতনতার অভাব। শিক্ষার্থীদের মাধ্যমেই পরিবার ও সমাজে ট্রাফিক আইন মানার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে হলে প্রতিটি নাগরিককে দায়িত্ববান হতে হবে।”
তারা আরও বলেন, “নিসচা’র মতো সংগঠনগুলো সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক যে উদ্যোগ নিচ্ছে, তা প্রশংসনীয়। এ ধরনের বিতর্ক ও সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে উৎসাহিত করতে হবে।”
পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী
প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলগুলোর হাতে পুরস্কার হিসেবে বই প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানস্থল ছিল শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও নিসচা সদস্যদের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারীরা প্রতিশ্রুতি দেন, তারা নিজেরা ট্রাফিক আইন মেনে চলবেন এবং অন্যদেরও তা মানতে উদ্বুদ্ধ করবেন।
ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি
নিসচা ভৈরব শাখার আয়োজকরা জানান, মাসব্যাপী এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী সপ্তাহে স্কুলভিত্তিক সেমিনার, ট্রাফিক সচেতনতা র্যালি ও পোস্টার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
সর্বমোট আয়োজনজুড়ে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ, স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা এবং গণমাধ্যমের উপস্থিতি—সব মিলিয়ে দিনটি ভৈরবে এক অনুপ্রেরণাদায়ক উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
Post a Comment