জয়নাল আবেদীন রিটন, ভৈরব প্রতিনিধি ॥
ভৈরবকে পৃথক জেলা ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনের ঢেউ ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। “কিশোরগঞ্জ না ভৈরব, ভৈরব চাই জেলা এখনই”—এই স্লোগানে মুখর হয়ে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বেলা ১১টায় ভৈরব বাজার জংশনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে অংশ নেন ভৈরবের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, যুব সমাজের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। বিক্ষোভকারীরা প্ল্যাকার্ড হাতে জেলা ঘোষণার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
চার দিন ধরে আন্দোলন অব্যাহত
টানা চতুর্থ দিনের মতো বৃহস্পতিবারও ছাত্র–জনতা রাস্তায় নেমে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। তবে এদিন ভৈরব হয়ে ঢাকা–সিলেট, ঢাকা–চট্টগ্রাম ও কিশোরগঞ্জ–ময়মনসিংহগামী ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়।
মানববন্ধন শেষে ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি মুহাম্মদ জাহিদুলের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন—গণঅধিকার পরিষদের নেতা ইমতিয়াজ আহমেদ কাজল, সমাজকর্মী এনকে সোহেল, মাওলানা শাহরিয়ার, গোলাম মহিউদ্দিন, মুহাম্মদ জুনায়েদ, মুহাম্মদ ফাহিম, মুহাম্মদ আবির প্রমুখ।
‘ভদ্রতাকে দুর্বলতা ভেবো না’—বক্তাদের হুঁশিয়ারি
বক্তারা বলেন, “আমরা চার দিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু যদি সরকার ভৈরবকে জেলা ঘোষণা না করে, তবে এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আরও কঠোর রূপ নিতে পারে। আমাদের ভদ্রতাকে দুর্বলতা ভেবে ভুল করবেন না।”
তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “দাবি না মানলে আমরা ভৈরব থেকে ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের সড়ক, রেল ও নৌপথ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেব। তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে যাবে। এর দায় নিতে হবে সরকারকেই।”
‘১৪ বছর ধরে ভৈরববাসীর সঙ্গে তামাশা’
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, “২০০৯ সালে তৎকালীন সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ভৈরবকে প্রস্তাবিত জেলা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ব্যক্তিগত স্বার্থে সেটি বাস্তবায়ন করা হয়নি। ১৪ বছর ধরে আমাদের সাথে তামাশা চলছে।”
তারা বলেন, “ভৈরবের ভৌগোলিক অবস্থান, শিল্প–বাণিজ্যিক গুরুত্ব, জনসংখ্যা ও প্রশাসনিক কাঠামো জেলা হওয়ার সব শর্তই পূরণ করে। অথচ বারবার আমাদের দাবি উপেক্ষা করা হচ্ছে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি
ইন্টেরিম (অন্তর্বর্তীকালীন) সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্প্রতি দেশের নতুন জেলা ও বিভাগের প্রস্তাবনা তৈরি করেছে। ভৈরববাসীর দাবি—এই সরকারের আমলেই দ্রুত ভৈরবকে পৃথক জেলা ঘোষণা করতে হবে।
বক্তারা বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার এখনই ভৈরবকে জেলা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিক। আমরা চাই, ভৈরব জেলা ঘোষণা করে সেটি ঢাকা বিভাগের অধীনেই রাখা হোক, কারণ ভৌগোলিকভাবে ভৈরব ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগে অনেক বেশি সুবিধাজনক।”
পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা
মানববন্ধন শেষে আয়োজকরা শনিবার (১৮ অক্টোবর) বন্দরনগরী ভৈরব বাজার লঞ্চঘাট এলাকায় বৃহত্তর সমাবেশ ও পরবর্তী কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন।
তারা বলেন, “ভৈরববাসী ঐক্যবদ্ধ। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে ভৈরবকে প্রস্তাবিত জেলা হিসেবে সরকারি গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে প্রশাসনিক জটিলতা ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে বিষয়টি থেমে যায়।
সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ জেলা ময়মনসিংহ বিভাগে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্তের পর ভৈরবজুড়ে আবারও জেলার দাবিতে আন্দোলনের স্রোত বয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা মনে করেন, “ভৈরব হচ্ছে ঢাকা বিভাগের পূর্বদ্বার। এখানে শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য ও যোগাযোগে যেভাবে অগ্রগতি ঘটেছে, তা নিজস্ব জেলা প্রশাসন ছাড়া আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।”
শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান
এদিকে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছেন। পুলিশ সবসময় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
ভৈরব থানার ওসি খন্দকার ফুয়াদ রুহানি বলেন, “মানুষ তাদের দাবি নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করছে। আমরা সব ধরনের সহায়তা করছি যেন কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে।”
Post a Comment