‘দায় চাপানোর রাজনীতি শুভ হবে না’— গুরুদয়াল কলেজ শিবির সভাপতির হুঁশিয়ারি

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সংগঠন ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরকে ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, সেটি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির গুরুদয়াল কলেজ শাখা। শিবিরের দাবি— যাকে কেন্দ্র করে এই কর্মসূচি, তার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং ওই ব্যক্তির সঙ্গে ছাত্রদলের সম্পর্কের প্রমাণ মিলেছে বলেও অভিযোগ করেছে সংগঠনটি।

শিবির সভাপতির অভিযোগ

রবিবার এক লিখিত বিবৃতিতে গুরুদয়াল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, ছাত্রদল ইচ্ছাকৃতভাবে দায় চাপানোর রাজনীতি করছে। তিনি দাবি করেন, “যে ছেলেটির ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের দুরতম সম্পর্কও নেই। অথচ ছাত্রদল নিজেদের বিতর্ক ঢাকতে শিবিরকে দায়ী করছে।”

এমদাদুল হক অভিযোগ করেন, ছাত্রদল তাদের ব্যানারে শিবিরের নাম জড়িয়ে মিথ্যাচার করেছে। তিনি বলেন, “শিবিরের বিরুদ্ধে দায় চাপানোর এই দুঃসাহস কেবল রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের বহিঃপ্রকাশ। ছাত্রদলের ভাইদের উদ্দেশে বলছি— দায় চাপানোর রাজনীতি নিয়ে ক্যাম্পাসে আসবেন না। সচেতন ছাত্রসমাজ এসব ট্যাগিং আর অপবাদ রাজনীতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে।”

অতীতের অপবাদ প্রসঙ্গ

বিবৃতিতে শিবির সভাপতি আরও উল্লেখ করেন, তাদের দীর্ঘ সংগ্রামী পথচলায় নানা অপবাদের শিকার হতে হয়েছে। তবে নারী নিপীড়ন বা ধর্ষণের মতো অভিযোগ কখনো প্রমাণিত হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। বিপরীতে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে এক বছরের কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি খুললে “উপন্যাস লেখা যাবে” বলেও মন্তব্য করেন।

তিনি সতর্ক করে বলেন, “ছাত্রদল দায় চাপানোর রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে তা তাদের জন্য কোনোভাবেই কল্যাণকর হবে না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।”

ছাত্রদলের অবস্থান

এ ঘটনায় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো লিখিত প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় সূত্র জানায়, ফেসবুক পোস্ট নিয়ে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, সেটি কেন্দ্র করে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। তাদের অভিযোগ, উসকানিমূলক পোস্টের পেছনে শিবির-সম্পর্কিত একটি মহল রয়েছে।

তবে শিবিরের দাবি, ওই ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয় ছাত্রদলের সঙ্গেই যুক্ত। ফলে দায় চাপিয়ে অন্য সংগঠনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে।

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

গুরুদয়াল কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। অনেকে মনে করেন, রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর পারস্পরিক দোষারোপে ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, “প্রতিদিন নতুন ইস্যুতে ঝামেলা হয়। অথচ পড়াশোনার পরিবেশটাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

তৃতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর এই দায় চাপানো আমাদের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনে না। উল্টো সেশনজট আর অনিশ্চয়তা বাড়ছে।”

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি

শিক্ষা আন্দোলন ও ছাত্ররাজনীতি পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, দায় চাপানোর প্রবণতা ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে নতুন নয়। তবে ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টকে কেন্দ্র করে যেভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করা হচ্ছে, তা ক্যাম্পাস রাজনীতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, “যে কোনো গণতান্ত্রিক ছাত্রসংগঠনের উচিত সত্য যাচাই করে দায়িত্বশীল অবস্থান নেওয়া। দায় চাপানো বা ট্যাগিংয়ের রাজনীতি শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।”

বর্তমান পরিস্থিতি

এ ঘটনার পর ক্যাম্পাসে সরাসরি কোনো সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি।

শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, রাজনৈতিক সংগঠনগুলো দোষারোপের রাজনীতি বাদ দিয়ে পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post