জয়নাল আবেদীন রিটন, ভৈরব প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ
ভৈরব, কিশোরগঞ্জ: পরকীয়া প্রেমের জেরে দেড় বছরের শিশু নুসরাতকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগে মূল অভিযুক্ত আলমগীর মিয়াকে তিন মাস পর গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১৪। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে ভৈরবের শিবপুর ইউনিয়নের টান কৃষ্ণনগর এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মোবাইল ফোনে লুডু খেলা অবস্থায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শিশুটির মা আয়েশা খাতুনকে ঘটনার দিনই আটক করেছিল পুলিশ।
ভৈরব র্যাব ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার, সিনিয়র পুলিশ সুপার মো. মুহিত কবীর সের্নীয়াবাত, বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গ্রেপ্তারকৃত আলমগীর শিবপুর ইউনিয়নের টান কৃষ্ণনগর গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সে পলাতক ছিল। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তার অবস্থান শনাক্ত করা হয় এবং সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঘটনার সূত্রপাত: পরকীয়ার জেরে কলহ
নিহত শিশু নুসরাতের দাদা আবুল কালামের দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর আগে নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার নিলক্ষীয়া গ্রামের ওমর ফারুকের সঙ্গে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার চন্দ্রগুনা গ্রামের আয়েশা খাতুনের বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবন সুখেই চলছিল, এবং তাদের তিন বছরের ছেলে আলিফ ও দেড় বছরের মেয়ে নুসরাতের জন্ম হয়। কিন্তু পাদুকাশ্রমিক ওমর ফারুকের পেশার সুবাদে ভৈরবে আসার পর তার জীবনে অশান্তি নেমে আসে। ভৈরবের জগন্নাথপুরের লক্ষ্মীপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকার সময় একই পেশার আরেক শ্রমিক আলমগীরের সঙ্গে তার পরিবারের পরিচয় হয়। এই পরিচয়ের সূত্র ধরে আলমগীর ও আয়েশার মধ্যে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
আয়েশার এই অবৈধ সম্পর্কের কারণে ওমর ফারুকের সংসারে অশান্তি চরমে পৌঁছায়। একপর্যায়ে গত এপ্রিল মাসে আয়েশা তার তিন বছরের ছেলেকে স্বামীর কাছে রেখে দেড় বছরের মেয়ে নুসরাতকে নিয়ে পরকীয়া প্রেমিক আলমগীরের সঙ্গে পালিয়ে আসে। তারা দুজন লক্ষ্মীপুর এলাকায় শাহীন কবীর নামের এক ব্যক্তির বাসায় ভাড়া থাকা শুরু করে।
হত্যাকাণ্ড ও মামলা
গত ৭ জুন রাতে ওই ভাড়া বাসায় হঠাৎ করেই আয়েশার চিৎকার-চেঁচামেচি শোনা যায়। তার চিৎকারে প্রতিবেশী ও বাড়ির মালিক ছুটে গিয়ে দেখেন, ছোট্ট নুসরাত মারা গেছে। শিশুটির অস্বাভাবিক মৃত্যুতে সন্দেহ হলে বাড়ির মালিক তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে আয়েশা খাতুনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে।
পরদিন ৮ জুন নিহত শিশু নুসরাতের দাদা আবুল কালাম বাদী হয়ে ভৈরব থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আয়েশা খাতুন ও তার পরকীয়া প্রেমিক আলমগীরকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের পর থেকেই আলমগীর পলাতক ছিল, যা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
র্যাব-১৪-এর একটি চৌকস দল দীর্ঘ তিন মাস ধরে এই মামলার তদন্ত ও পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য কাজ করছিল। তথ্যপ্রযুক্তি এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তারা জানতে পারে যে আলমগীর টান কৃষ্ণনগর এলাকায় আত্মগোপন করে আছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শুক্রবার সকালে তাকে ভৈরব থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে শিশু নুসরাত হত্যাকাণ্ডের বিচারিক প্রক্রিয়া এক ধাপ এগিয়ে গেল। এলাকাবাসী এবং নিহতের পরিবার আশা করছে, দ্রুততম সময়ে এই জঘন্য অপরাধের বিচার সম্পন্ন হবে।
Post a Comment