মতিউর রহমানকে গোপন বৈঠকের সুযোগ: কিশোরগঞ্জ পুলিশে বড় ধাক্কা, ১১ সদস্য বরখাস্ত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা এবং বহুল আলোচিত “ছাগল–কাণ্ডের” নায়ক মতিউর রহমানকে আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় গোপন বৈঠকের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশের ১১ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন এসআই এবং বাকিরা কনস্টেবল।

কী ঘটেছিল সেদিন

গত ১২ আগস্ট দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মতিউর রহমানকে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের কার্যক্রম শেষে ফেরার পথে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার সৈয়দনগরে অবস্থিত নিরালা হাড্ডি নামের এক রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবারের জন্য যাত্রাবিরতি দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা।

অভিযোগ উঠেছে, ওই সময় পুলিশ সদস্যরা উৎকোচ গ্রহণ করে মতিউর রহমানকে রেস্তোরাঁর একটি কেবিনে বসিয়ে অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে গোপন বৈঠকের সুযোগ দেন। এদিকে স্কর্ট দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা সাধারণ আসনে বসে খাবার খান।

তদন্তে প্রমাণ মিলেছে

এ ঘটনার পর কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেন। তিনি জানান,

> “ঘটনার পরপরই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। সে ভিত্তিতেই এক এসআই ও ১০ কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।”



বরখাস্তদের মধ্যে এসআই আবুল কাশেম ছাড়াও কনস্টেবল মনিরুজ্জামান, কবির হোসেন, ইমরান, নির্জন খান, শামীম আলম, রনি হোসেন, শরীফুল ইসলাম, তানভীর রহমান, আবু সাইদ মিয়া ও রবীন্দ্র দাস রয়েছেন।

রেস্তোরাঁ মালিকের বক্তব্য

নরসিংদীর সৈয়দনগরে অবস্থিত নিরালা হাড্ডি রেস্তোরাঁর মালিক আবুল কাশেম ভূঁইয়া সংবাদমাধ্যমকে জানান, ঘটনার দিন তিনি নিজেই রেস্তোরাঁয় ছিলেন।

> “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে নিশ্চিত হয়েছি, ঘটনাটি আমার রেস্তোরাঁতেই ঘটেছে। মতিউর রহমানকে একটি কেবিনে বসানো হয়েছিল।”



কারাগার সূত্রে তথ্য

কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার রিতেশ চাকমা বলেন, মতিউর রহমানকে গত ১১ এপ্রিল এই কারাগারে আনা হয়। পরবর্তী সময়ে তাকে তিনবার ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়েছে। সর্বশেষ ১২ আগস্ট তাকে আদালতে নেওয়া হয় এবং একই দিনে কারাগারে ফিরিয়ে আনা হয়। পরে ২৬ আগস্ট তাকে কাশিমপুর-২ কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

তিনি আরও বলেন,

> “আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে যদি তারা এমন সুযোগ করে দেন, তা গুরুতর দায়িত্বে অবহেলা।”



ভাবমূর্তিতে আঘাত

অবসরপ্রাপ্ত এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন,

> “হাজতিকে গোপন বৈঠকের সুযোগ দেওয়া শুধু আইন ভঙ্গ নয়, এটি পুরো বাহিনীর ভাবমূর্তিতে বড় ধাক্কা। এর ফলে পুলিশের প্রতি জনআস্থা আরও কমে যেতে পারে।”



আলোচিত মতিউর

সম্প্রতি বিলাসবহুল জীবনযাপন ও “ছাগল–কাণ্ড” নিয়ে আলোচনায় আসা সাবেক কর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে সম্পদের অসংগত উৎস অনুসন্ধান চলছে। তার মতো আলোচিত এক আসামিকে গোপন বৈঠকের সুযোগ করে দেওয়ার ঘটনায় নতুন করে জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post