ভৈরব প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাফে মোহাম্মদ ছড়ার বিরুদ্ধে মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলনের ইজারাদারের কাছ থেকে প্রতিদিন এক লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে ড্রেজার জব্দের সময় ইজারাদারের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রায় ১২ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগও করেন ভুক্তভোগীরা।
শনিবার সকালে ভৈরব প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন ইজারাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাগিব এন্টারপ্রাইজের মালিক তানভীর আহমেদ নাগিব। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, চলতি বছরের ১৪ মে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন ১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকায় ভৈরব উপজেলার আগানগর ও সাদেকপুর ইউনিয়নের মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলনের ইজারা দেয় তাদের প্রতিষ্ঠানকে।
ইজারাদারের অভিযোগ
তানভীর আহমেদ নাগিবের দাবি, ইজারা নেওয়ার পর উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে বৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন তারা। হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ অনুযায়ী নির্ধারিত সীমারেখার ভেতর থেকেই উত্তোলন কার্যক্রম চালানো হয় এবং নিয়মিতভাবে সরকারি কোষাগারে রাজস্বও জমা দেওয়া হয়।
কিন্তু এরপর আশুগঞ্জ ইউএনও রাফে মোহাম্মদ ছড়া প্রতিদিন এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করতে শুরু করেন। দাবীকৃত অর্থ প্রদান না করায় সম্প্রতি ভৈরব সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে তার চারটি ড্রেজার ও পাঁচটি বাল্কহেড জব্দ করা হয়।
এ সময় দুই শ্রমিককে এক বছরের সাজা দেওয়া হয় এবং নির্যাতনের মাধ্যমে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করা হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি। শুধু তাই নয়, ড্রেজার থেকে বালু বিক্রির দুই দিনের জমা ও অন্যান্য টাকা মিলিয়ে প্রায় ১২ লাখ টাকা নেওয়া হয়, যা প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তানভীর আহমেদ অভিযোগ করেন,
> “আমরা বৈধভাবে ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন করলেও ইউএনও অযৌক্তিকভাবে চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় আমাদের কোটি টাকার যন্ত্রপাতি জব্দ করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, শ্রমিকদেরও হয়রানি করা হয়েছে।”
ইউএনও’র পাল্টা বক্তব্য
অভিযোগ প্রসঙ্গে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফে মোহাম্মদ ছড়া গণমাধ্যমকে বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তিনি দাবি করেন, ভৈরব ও আশুগঞ্জের দুটি স্থানে নদী থেকে বালু উত্তোলন চলছে। এর মধ্যে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং জাতীয় গ্রিড লাইনের সন্নিকটে বালু উত্তোলন করা হলে তা জননিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন,
> “তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা জাতীয় গ্রিড লাইনের এক কিলোমিটারের ভেতরে যে কেউ বালু উত্তোলন করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভৈরবে তারা ওই সীমার ভেতরে ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলছিল, তাই ড্রেজার ও বাল্কহেড জব্দ করা হয়েছে।”
আইনি প্রেক্ষাপট
রেললাইন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র কিংবা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার কাছাকাছি নদী থেকে বালু উত্তোলন করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে স্থাপনার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রশাসনের দাবি, নিরাপত্তার স্বার্থে নিয়মিত নজরদারি চালানো হয় এবং সীমানা লঙ্ঘনকারী ড্রেজারের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়।
তবে ইজারাদার পক্ষ বলছে, তাদের কার্যক্রম নির্ধারিত সীমানার ভেতরেই সীমাবদ্ধ ছিল। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের অবস্থান ও ইজারাদারের দাবি একেবারেই ভিন্ন।
যেভাবে প্রভাবিত হচ্ছে বালু ব্যবসা
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মেঘনা নদীর বালু ব্যবসা এলাকায় কোটি কোটি টাকার বাজার তৈরি করেছে। বৈধ ইজারাদারের পাশাপাশি নানা সময় অবৈধ উত্তোলনকারীরাও সক্রিয় থাকে। এতে প্রায়ই সংঘাতের ঘটনা ঘটে। প্রশাসনের অভিযানের কারণে অনেক বৈধ ব্যবসায়ীও হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, বৈধ-অবৈধ উত্তোলনের মধ্যে পার্থক্য করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। সীমারেখা লঙ্ঘন হলে কঠোর ব্যবস্থা নিতেই হবে।
সার্বিক পরিস্থিতি
ভৈরব প্রেসক্লাবের সংবাদ সম্মেলনে ইজারাদার তানভীর আহমেদ নাগিব প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেন। তিনি বলেন, বৈধ ব্যবসা করেও যদি এমনভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়, তবে সাধারণ উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হবেন।
অন্যদিকে ইউএনও রাফে মোহাম্মদ ছড়ার দাবি, তার সব পদক্ষেপ আইন ও জনস্বার্থের অংশ হিসেবেই নেওয়া হয়েছে।
মেঘনায় বালু উত্তোলন ঘিরে প্রশাসন ও ইজারাদারের এই বিরোধে স্থানীয়রা বিভক্ত। কেউ কেউ মনে করছেন, বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী মহলই এ ধরনের বিতর্ক বাড়িয়ে তুলছে। আবার অন্য অংশ বলছে, বৈধ ব্যবসা করেও চাঁদা দাবি অগ্রহণযোগ্য।
Post a Comment