জয়নাল আবেদীন রিটন, ভৈরব প্রতিনিধি
অস্বাভাবিক তাপমাত্রা ও তীব্র গরমে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের খামারি ও প্রান্তিক কৃষকরা মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন। প্রচণ্ড গরমে গবাদি পশুর মাঝে নানা ধরনের রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে কমে গেছে দুধ উৎপাদন, বেড়েছে চিকিৎসা খরচ ও বিদ্যুতের ব্যয়। ফলে লোকসানের শঙ্কায় দিন পার করছেন খামারিরা।
রোগবালাই ও দুধ উৎপাদনে ধস
সরেজমিনে জানা গেছে, প্রচণ্ড গরমে গরুর মাঝে খোড়া রোগ, হাপানি, শ্বাসকষ্ট, লাম্পিং, সর্দি–কাশি ও জ্বর দেখা দিচ্ছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়ছে দুধ উৎপাদনে। স্বাভাবিক সময়ে একটি গাভি প্রতিদিন যেখানে ২০–২৫ লিটার দুধ দিত, এখন সেটি নেমে এসেছে ১২–১৫ লিটারে। অনেক ক্ষেত্রে দুধের মানও কমে গেছে।
গরু অসুস্থ হয়ে পড়ায় নিয়মিত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে খামারিদের। প্রতিদিন ৫–৭ বার গোসল করানো, ফ্যান চালিয়ে রাখা, স্যালাইন ও দানাদার খাবার খাওয়ানো—সব মিলিয়ে খরচ বাড়ছে বহুগুণ। বিশেষ করে বিদ্যুতের বিল ও চিকিৎসা খরচ খামারিদের জন্য বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খামারিদের অভিজ্ঞতা
ভৈরবের মেসার্স রোজেন ডেইরি ফার্মের মালিক রোজেন আহমেদ জানান, তাঁর খামারে প্রিমিয়াম ও জার্সি জাতের ৩০টি গরু আছে। গরমে এই জাতের গরুগুলো বেশি সমস্যায় পড়ে। তিনি বলেন, “গরমে ২টা গরুর জন্য ১টা করে ফ্যান চালাতে হয়। গরু ঠিকমতো খেতে চায় না, ফলে দুধ কমে যায়। প্রতিদিন কয়েকবার গোসল করাতে হয়। গরুর শরীর ঠান্ডা না রাখলে মৃত্যুঝুঁকি থেকে যায়।”
মেসার্স আয়ান ডেইরি ফার্মের খামারি ফিরোজ রহমান বলেন, “গরমে গরুর শ্বাসকষ্ট, জ্বর, খোড়া রোগ দেখা দেয়। তখন দুধ কমে যায়, আর যে দুধ পাওয়া যায় তার মানও ভালো থাকে না। চিকিৎসার জন্য প্রাণীসম্পদ অফিসে গেলে ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের দেওয়া ওষুধ দিয়ে বিদায় করে দেয়। সরকারের বরাদ্দকৃত ওষুধ আমরা পাই না।”
শিমুলকান্দি গ্রামের কৃষক রহিম মিয়া ও জসিম উদ্দিন জানান, তাঁরা প্রতিদিন গরুকে টিউবওয়েলের পানি বা কাছাকাছি খালে গোসল করান। কিন্তু তাতেও পুরোপুরি স্বস্তি মেলে না। আবার কিছুক্ষণ পর গরুগুলো হাঁপাতে শুরু করে।
শ্রীনগর গ্রামের কৃষক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “আমার গাভি আগে দৈনিক ৮–১০ লিটার দুধ দিত। এখন সেটি নেমে এসেছে ৪–৫ লিটারে। গরুকে ঠান্ডা রাখতে প্রতিদিন মোটর চালিয়ে পানি তুলতে হয়। বিদ্যুৎ বিল বেড়ে গেছে, আয় কমে গেছে।”
অন্য কৃষক বাদল মিয়ার অভিযোগ, স্থানীয় নদী–খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় গরুকে স্নান করানো কঠিন হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে মোটরের পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে, যা ব্যয় বাড়াচ্ছে।
কর্তৃপক্ষের পরামর্শ
উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আজাহারুল আলম জানান, তীব্র তাপপ্রবাহে গবাদি পশুর মাঝে জ্বর, সর্দি, লাম্পিং, গলা ফোলা ও খোড়া রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, “প্রচণ্ড গরমে গরুকে বারবার গোসল করাতে হবে। ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে। নিয়মিত টাটকা ঘাস ও দানাদার খাবার খাওয়াতে হবে। গরুর শরীর ঠান্ডা রাখতে পারলেই মৃত্যুঝুঁকি কমবে।”
তিনি আরও জানান, খামারি ও কৃষকদের সহযোগিতার জন্য ৭টি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিম ইউনিয়ন পর্যায়ে গিয়ে খামারিদের পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করছে।
Post a Comment