কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আবারও বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ ধরা পড়েছেন চিহ্নিত নারী মাদককারবারি জোনাকি বেগম (২৫)। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো তাকে আটক করল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) ভৈরব শাখার সদস্যরা। শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরব টোলপ্লাজা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।
জোনাকি পুকুরপাড় এলাকার মাঈনুদ্দিন মিয়ার স্ত্রী। স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই তিনি পেশাদারভাবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এর আগেও একাধিকবার তাকে আটক করা হলেও জামিনে বের হয়ে ফের একই অপরাধে লিপ্ত হচ্ছেন।
অভিযানের বিবরণ
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জ কার্যালয়ের পরিদর্শক চন্দন গোপাল সুর জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। টোলপ্লাজার কাছে একটি ভাড়া করা মোটরসাইকেলে যাতায়াতকালে জোনাকিকে আটক করা হয়। পরে তার শরীর তল্লাশি করে সুকৌশলে লুকানো দুই হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, “আমি ভৈরবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি মাত্র তিনদিন হলো। যোগদানের পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছি। এর অংশ হিসেবে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর কাছে স্মৃতি বেগম নামে এক নারীকে ৬ কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন একই স্থান থেকে মাঈন উদ্দিন নামে আরেকজনকে ৮ কেজি গাঁজাসহ আটক করা হয়। আর আজ (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জোনাকিকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়েছে।”
পরিদর্শক আরো জানান, আটক জোনাকির বিরুদ্ধে তিনি নিজে বাদী হয়ে ভৈরব থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেছেন।
আগের ঘটনাও আলোচিত হয়েছিল
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এর আগেও একই এলাকায় জোনাকি এবং তার স্বামী মাঈনুদ্দিনকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়েছিল। গত ২৮ জুলাই ঢাকাগামী একটি বাস থেকে নামার পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিএনসি ভৈরব শাখার সদস্যরা দম্পতিকে আটক করে। তখন তাদের হেফাজত থেকে প্রায় ৭ হাজার ৮০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
তবে কিছুদিনের মধ্যে তারা জামিনে বের হয়ে আসেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, মুক্তি পাওয়ার পর ফের তারা একই কাজ শুরু করে। অবশেষে ২০ সেপ্টেম্বর আবারও ইয়াবাসহ জোনাকিকে গ্রেফতার করা হলো।
ভৈরবে মাদকবিরোধী অভিযানের গতি
ভৈরব একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কারণে এখানে মাদক চোরাচালান দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। মাদকবিরোধী সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, টোলপ্লাজা ও সেতুর আশেপাশের অঞ্চলগুলো মাদক পাচারকারীদের জন্য রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এ কারণে নিয়মিত অভিযান চালানো হলেও মাদক ব্যবসা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
পরিদর্শক চন্দন গোপাল সুর জানান, তিনি যোগদানের পরপরই ভৈরবকে মাদকমুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে অভিযান জোরদার করেছেন। “মাদক ব্যবসায় জড়িত কারও বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না,” তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
ভৈরববাসীর মতে, জোনাকি বেগমের মতো কিছু নারী মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ায় সামাজিক পরিস্থিতি আরো নাজুক হচ্ছে। অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে জামিনে বের হয়ে তারা পুনরায় একই কাজে যুক্ত হয়ে পড়ছে। এজন্য বিচারিক প্রক্রিয়া আরো কঠোর হওয়া উচিত বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
Post a Comment