ভৈরবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মালচিং পদ্ধতির চাষাবাদ

ভৈরব প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নতুন মাত্রা যোগ করেছে মালচিং পদ্ধতির চাষাবাদ। অল্প সময়ে অধিক ফলন, উৎপাদন খরচ কমানো এবং আগাছা নিয়ন্ত্রণের সুবিধার কারণে কৃষকদের কাছে এ পদ্ধতি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। স্থানীয় কৃষকদের অভিজ্ঞতা এবং কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এ পদ্ধতিতে টমেটো, মরিচ, শসাসহ নানা সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা প্রথমে জমিতে বিশেষ কায়দায় বেড তৈরি করে মালচিং পেপার বিছিয়ে তাতে চারা রোপণ করছেন। পেপারের নিচে সারের মিশ্রণ ব্যবহার করার ফলে তা সহজে নষ্ট হয় না এবং জমিতে আগাছার জন্মও নিয়ন্ত্রণে থাকে। পাশাপাশি, বৃষ্টির পানি জমে না বলে শিকড় পচে যাওয়ার ঝুঁকিও কম থাকে। ফলশ্রুতিতে কৃষকরা অল্প সময়ে ভালো ফলন পাচ্ছেন, যা পূর্বের প্রচলিত চাষাবাদের তুলনায় অনেক বেশি লাভজনক।

কালিকাপ্রসাদের আতকাপাড়া গ্রামের এক নারী কৃষক জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় পঁচিশ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে এক কাটায় ৩৫ হাজার টাকার শসা বিক্রি করেছেন। জমিতে এখনো আরও ৭০-৮০ হাজার টাকার মতো শসা বিক্রি করার মতো ফলন রয়েছে। তার ভাষায়, “আগে প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষ করে লাভের আশা করা যেত না। কিন্তু মালচিং পদ্ধতিতে লোকসানের কোনো সুযোগ নেই।”

একই গ্রামের কৃষক লিয়াকত আলী বলেন, গত বছর তিনি প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষ করেছিলেন, কিন্তু ফলন আশানুরূপ হয়নি। এ বছর কৃষি অফিসারের পরামর্শে তিনি আধা বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে শসা লাগানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন। তার প্রত্যাশা, এবার ফলন ভালো হবে।

কৃষক ফালু মিয়া জানান, তার বড় ভাই কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নে ১৬ শতক জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে শসা আবাদ করেছেন। মাত্র এক মাসে প্রচুর ফলন এসেছে। বৃষ্টির পানি জমেনি এবং আগাছা জন্মায়নি। তিনি আশা করছেন ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ করে লাখ টাকার শসা বিক্রি করতে পারবেন। এ সাফল্য দেখে তিনিও মরিচ চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন।

কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের আরেক কৃষক রহমত আলী বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শে এ অঞ্চলের বহু কৃষক এখন মালচিং পদ্ধতিতে আগ্রহী হচ্ছেন। পানির জমাট বাধা কিংবা আগাছার সমস্যায় ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে।

কৃষি কর্মকর্তারাও মালচিং পদ্ধতিকে কৃষকদের জন্য যুগোপযোগী এবং লাভজনক হিসেবে উল্লেখ করছেন। কালিকাপ্রসাদ ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা চন্দন সূত্রধর বলেন, “রাসায়নিক সারের সঠিক ব্যবহার এবং মালচিং পেপার ব্যবহারের ফলে জমিতে আর্দ্রতা বজায় থাকে, আগাছা জন্ম কমে এবং অতিরিক্ত শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। এ কারণে কৃষকের খরচ যেমন কমে, তেমনি উৎপাদনও বেড়ে যায়।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম বলেন, “মালচিং সিড একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি। এটি ব্যবহারে মাটির আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেচের খরচ কমে, সারের অপচয়ও হয় না। ফলে উৎপাদন খরচ কমে গিয়ে ফলন অনেক বেড়ে যায়। তাই ভৈরবের প্রায় সব ইউনিয়নেই কৃষকদের মধ্যে এ পদ্ধতি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।”

স্থানীয় কৃষকদের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করছে, মালচিং পদ্ধতিতে শুধু খরচই কম নয়, বরং দ্রুত সময়ের মধ্যে বাজারজাত করার মতো ফলনও পাওয়া যাচ্ছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে ভৈরবই নয়, অচিরেই কিশোরগঞ্জ জেলার সর্বত্র মালচিং পদ্ধতি কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।

Post a Comment

Previous Post Next Post