কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বাশাদ মিয়া (২৪) নামে এক রংমিস্ত্রির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার রামদী ইউনিয়নের পূর্ব তারাকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত বাশাদ মিয়া একই গ্রামের আমড়ু মিয়ার ছেলে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন বাশাদ মিয়া বাড়ির পাশের কলাবাগানে কাজ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ পাশ দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের খোলা তারে অসাবধানতাবশত তিনি হাত দিলে সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। ছেলের এমন অবস্থা দেখে তাকে বাঁচাতে ছুটে আসেন তার মা হেলেনা আক্তার। তিনিও বিদ্যুতের সংস্পর্শে এসে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আশপাশের লোকজন চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দ্রুত তাদের উদ্ধার করেন। পরে দু’জনকে বাজিতপুরের ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাশাদ মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মা হেলেনা আক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন।
হঠাৎ এ দুর্ঘটনায় পুরো পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নিহতের আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, পরিশ্রমী ও ভদ্র স্বভাবের বাশাদ মিয়া রংমিস্ত্রির কাজ করেই সংসার চালাতেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য ছিলেন তিনি। অল্প বয়সে এভাবে মৃত্যুতে তার বাবা-মা ও আত্মীয়রা ভেঙে পড়েছেন। এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের আবহ ছড়িয়ে পড়েছে।
নিহতের চাচাতো ভাই রুবেল মিয়া বলেন, “আমরা কেউ ভাবতেই পারিনি এভাবে হঠাৎ করে আমাদের বাশাদকে হারাব। কিছুদিন আগে সে বলেছিল, সংসারের হাল ধরতে হবে তাকে। কিন্তু আল্লাহ বোধহয় ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।”
রামদী ইউনিয়নের স্থানীয় মেম্বার আব্দুল কাদির বলেন, “খুব পরিশ্রমী ও শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিল বাশাদ। হঠাৎ তার মৃত্যুতে গ্রামের সবাই শোকাহত। পরিবারের জন্য বিষয়টি ভীষণ কষ্টদায়ক।”
এদিকে ঘটনার পরপরই এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি ও তারের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গ্রামবাসী। তারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় খোলা তার ঝুলে ছিল। এ বিষয়ে একাধিকবার বিদ্যুৎ বিভাগে অভিযোগ জানানো হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত এলাকাজুড়ে ঝুঁকিপূর্ণ তার ও খুঁটি সংস্কার করা জরুরি, না হলে যে কোনো সময় আবারো বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এক যুবকের মৃত্যুর খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের হয়েছে।”
এছাড়া ওসি আরও জানান, স্থানীয়ভাবে বিদ্যুতের তার ও খুঁটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।
মাত্র ২৪ বছর বয়সে বাশাদ মিয়ার অকাল মৃত্যুতে শোকাহত তার পরিবার ও গ্রামবাসী এখনো স্তম্ভিত। তরুণ বয়সে জীবন হারানোয় শোকাহত স্বজনদের চোখে ঝরছে অশ্রু। এলাকার মানুষজন বলছেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যকে হারিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
Post a Comment