কিশোরগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা

কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. হেলিশ রঞ্জন সরকারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালেরই প্যাথলজি বিভাগে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মরত এক নারী কর্মচারী সম্প্রতি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
রোববার (৩১ আগস্ট) দায়ের করা মামলাটি সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) আদালত গ্রহণ করে। মামলাটি গ্রহণের পর জেলা ও দায়রা জজ নূরুল আমিন বিপ্লব কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এফআইআর নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন।

কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম রতন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

চাকরিচ্যুতির ভয়, কুপ্রস্তাব ও হুমকি

এজাহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক দীর্ঘদিন ধরে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার ভয় দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দিতেন। প্রস্তাবে সাড়া না দিলে চাকরি হারানো ও প্রাণনাশের হুমকিও দেন তিনি। একাধিকবার তাকে কক্ষে ডেকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেন। এমনকি বিভিন্ন সময় কুরুচিপূর্ণ বার্তাও পাঠাতেন তার মোবাইলে।

বাদী আরও দাবি করেন, বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে অভিযুক্ত পরিচালকের স্ত্রীও তাকে হুমকি দেন, যাতে তিনি নীরব থাকেন।

কোয়ার্টারে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ

নারী কর্মচারীর অভিযোগ অনুযায়ী, গত ২১ আগস্ট রাতে এক মীমাংসার কথা বলে ডা. হেলিশ রঞ্জন তাকে কোয়ার্টারে ডেকে পাঠান। বাদী সেখানে গেলে তিনি দেখতে পান অভিযুক্ত পরিচালকের স্ত্রী উপস্থিত নেই। অভিযোগ অনুযায়ী, সেদিন ওই কোয়ার্টারেই তাকে ধর্ষণ করা হয়।

পরবর্তীতে ২৬ আগস্ট বিকেলে অফিস কক্ষে আবারও তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন পরিচালক। তবে ওই সময় তার চিৎকার শুনে হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী ও দর্শনার্থী ছুটে আসেন এবং তাকে উদ্ধার করেন। তখন বিষয়টি ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত পরিচালক বাদীকে ‘বিবাহিত স্ত্রী’ পরিচয়ে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

থানায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগ

নারী কর্মচারী জানান, প্রথমে তিনি কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে গেলে ওসি মামলা নেননি। এ কারণে তিনি বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন।

অভিযুক্ত পরিচালকের বক্তব্য

মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ডা. হেলিশ রঞ্জন সরকার সংক্ষিপ্তভাবে বলেন, “এ বিষয়ে পরে কথা বলব। আমি এখন বাইরে আছি।”

পুলিশের প্রতিক্রিয়া

সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আদালতের আদেশের কপি এখনও থানায় পৌঁছায়নি। কপি পাওয়ার পর যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আলোড়ন সৃষ্টি

হাসপাতালের অভ্যন্তরে এই ঘটনা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এ ধরনের অভিযোগে হাসপাতালের সুনাম প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। অনেকে অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের অভ্যন্তরে নারী কর্মচারীরা নানা ধরনের হেনস্তার শিকার হচ্ছেন, তবে তারা প্রকাশ্যে মুখ খোলেন না চাকরি হারানোর ভয়ে।

বিশেষজ্ঞদের মত

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনায় দ্রুত তদন্ত করে সঠিক বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। বাংলাদেশ উইমেন লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক আইনজীবী জানান, “অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে শুধু অভিযুক্ত পরিচালকই নন, থানায় মামলা গ্রহণে গড়িমসি করার দায়েও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

সামাজিক প্রতিক্রিয়া

ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। অনেকেই নারী কর্মচারীর সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন যে তিনি ভয়ের মাঝেও আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। অন্যদিকে হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ ওঠায় সাধারণ মানুষের আস্থায় বড় ধাক্কা লেগেছে বলে মন্তব্য করছেন স্থানীয়রা

Post a Comment

Previous Post Next Post