পাগলা মসজিদের দান বক্সে চিঠি; আল্লাহ নাজমুলকে সারা জীবনের জন্য আমার করে দেন

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে প্রতি বারই পাওয়া যায় কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ, বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার। তবে এবার টাকার বস্তার সঙ্গে মিলল ভিন্নধর্মী এক চিরকুট, যেখানে প্রকাশ পেয়েছে ব্যক্তিগত ভালোবাসার আকুতি।
শনিবার (৩০ আগস্ট) সকাল ৭টার দিকে দানবাক্স খোলার সময় একাধিক খামের সঙ্গে পাওয়া যায় সেই চিরকুট। এতে লেখা ছিল, “আল্লাহ তুমি নাজমুলকে সারা জীবনের জন্য আমার করে দাও। আল্লাহ, আমি নাজমুলকে আমার স্বামী হিসেবে চাই। আমার আশা পূর্ণ করো।”

টাকা নয়, মনোবাঞ্ছার আবেদন

দানের টাকায় পূর্ণ বস্তা যেমন মসজিদ কমপ্লেক্সে স্বাভাবিক ঘটনা, তেমনি নানান ধরনের ব্যক্তিগত চিঠিও এখানে নতুন নয়। মসজিদ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, দানবাক্স খুললেই ভালোবাসা, পারিবারিক সমস্যা কিংবা রোগমুক্তির প্রার্থনা সম্বলিত চিরকুট পাওয়া যায়। তবে এবারের চিরকুট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যেই আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বিষয়টিকে সরল ভালোবাসার প্রকাশ মনে করলেও কেউ কেউ ধর্মীয় স্থানে এমন লেখা সমালোচনার চোখে দেখছেন।

৩২ বস্তা টাকা ও বিপুল মুদ্রা

প্রায় চার মাস ১৮ দিন পর পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এবার ১৩টি দানবাক্স থেকে উঠেছে ৩২ বস্তা ভরা টাকা। এছাড়া মুদ্রা, স্বর্ণালংকার এবং বিদেশি মুদ্রাও পাওয়া গেছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েকশ মানুষ এসব টাকা গণনায় অংশ নেন।

মসজিদ কমিটির সদস্য, মসজিদসংলগ্ন মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পার্শ্ববর্তী জামিয়া এমদাদিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী, রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অন্তত চার শতাধিক মানুষ গণনায় যুক্ত ছিলেন।

নিরাপত্তার ঘেরাটোপে টাকা গণনা

মসজিদের দ্বিতীয় তলায় বিপুল অর্থ গণনার কাজ চলে প্রশাসনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে। উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক মো. রমজান আলী। পুরো প্রক্রিয়ায় পুলিশ, আনসার ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক এরশাদুল আহমেদ বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

আগেও হয়েছিল রেকর্ড

এর আগে চলতি বছরের ১২ এপ্রিল পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলার সময় রেকর্ড ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা ওঠে। এর সঙ্গে মেলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার। মসজিদ কমিটির কর্মকর্তাদের মতে, দেশ-বিদেশের মানুষ স্বেচ্ছায় এখানে দান করে থাকেন, যা ইসলামী বিশ্বে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা।

চিরকুট নিয়ে জনমত

ভালোবাসা ভরা চিরকুটকে ঘিরে ইতোমধ্যেই নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এটি হয়তো কোনো তরুণীর হৃদয়ের ব্যথা প্রকাশ। কেউ কেউ মনে করছেন, সমাজে মানুষের অপ্রকাশিত বেদনা কখনো কখনো ধর্মীয় আবেদনের আকারে প্রকাশ পায়। তবে সমালোচনাও কম নেই। একাংশ বলছে, মসজিদের দানবাক্সে টাকা-পয়সা, খাদ্যসামগ্রী কিংবা দোয়ার চিঠি থাকাটা স্বাভাবিক, কিন্তু ব্যক্তিগত প্রেমের আবেদন রাখা শোভন নয়।

ঐতিহ্যবাহী দানসংগ্রহ

পাগলা মসজিদ শুধু কিশোরগঞ্জ নয়, সারাদেশেই আলোচিত একটি নাম। শত শত বছর ধরে এ মসজিদে আসা দান-অনুদান দেশের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় দানসংগ্রহ হিসেবে বিবেচিত হয়। দানবাক্স থেকে পাওয়া অর্থ ব্যয় করা হয় মসজিদ কমপ্লেক্স, এতিমখানা, মাদরাসা ও দুঃস্থ মানুষের কল্যাণমূলক কাজে।

Post a Comment

Previous Post Next Post