কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় এক অবাক করা ঘটনা ঘটেছে—মাত্র ১৯ বছরের এক গৃহবধূ একসঙ্গে তিন কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ভোরে করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই বিরল ঘটনা ঘটে। মা ও তিন নবজাতক বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
প্রসূতি নেকলেস বেগম, যিনি বিয়ের পর এই প্রথমবার সন্তান জন্ম দিলেন, ভোরের দিকে প্রসব বেদনা শুরু হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে সকাল ছয়টার দিকে তিনি একে একে তিনটি কন্যাশিশুর জন্ম দেন। আশ্চর্যের বিষয়, সন্তানদের জন্মের আগে তিনি নিজেই জানতেন না তার গর্ভে তিনটি শিশু রয়েছে। কারণ, পুরো গর্ভকালীন সময়ে তিনি কোনো ধরণের আল্ট্রাসনোগ্রাম বা ডাক্তারি পরীক্ষা করাননি।
নেকলেস বেগমের স্বামী আলী হোসেন একজন কৃষক। তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার গোপদিঘী গ্রামে। পরিবারে এ প্রথম একসঙ্গে তিন নবজাতকের আগমন হওয়ায় গ্রামে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা খবর পেয়ে হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছেন নবজাতক ও তাদের মাকে এক নজর দেখতে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, নিরাপদ প্রসব নিশ্চিত করতে সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ইনচার্জ মৌসুমি বেগম এবং মিডওয়াইফ সাবিহা সুলতানা রিংকি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাদের দক্ষ চিকিৎসা সেবায় মা ও শিশু সবাই সুস্থভাবে প্রসব সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়।
করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রিয়াদ শাহেদ রনি বলেন, “এটি আমাদের জন্য একটি আনন্দের ঘটনা। নিরাপদ প্রসবে আমাদের টিমের সাফল্য প্রমাণ করে যে উপজেলা পর্যায়েও মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব, যাতে প্রতিটি মা ও নবজাতক পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও যত্ন পায়।”
স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, তিন নবজাতকই স্বাভাবিক ওজন নিয়ে জন্মেছে এবং জন্মের পরপরই তাদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। বর্তমানে তারা নবজাতক কক্ষে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে আছে। মা নেকলেস বেগমও সুস্থ আছেন এবং ধীরে ধীরে শক্তি ফিরে পাচ্ছেন।
এদিকে, এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকায় কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেশীরা বলছেন, একই সাথে তিন সন্তানের জন্ম নেওয়া বিরল ঘটনা এবং এটি আল্লাহর বিশেষ দান। অনেকেই নবজাতকদের জন্য দোয়া ও শুভকামনা জানাচ্ছেন।
চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন, তিন নবজাতকের যত্ন নিতে মায়ের পর্যাপ্ত বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাদ্য এবং স্বাস্থ্যপরীক্ষা জরুরি। একই সঙ্গে শিশুদের টিকা এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশে একসঙ্গে তিন বা ততোধিক সন্তানের জন্ম বিরল নয়, তবে তা সাধারণত বড় শহরের উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে বেশি ঘটে। গ্রামীণ পরিবেশে, বিশেষ করে সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এমন ঘটনা বিরল বলে স্বাস্থ্যকর্মীরা উল্লেখ করেছেন।
এই সুখবর পরিবার ও এলাকাবাসীর জন্য যেমন আনন্দের, তেমনি উপজেলা স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের প্রতীক হিসেবেও দেখা হচ্ছে। চিকিৎসকরা আশা করছেন, এমন সাফল্যের ঘটনা গ্রামীণ জনগণের মাঝে স্বাস্থ্যসেবার প্রতি আস্থা বাড়াবে।
এই ঘটনাটি প্রমাণ করেছে, সঠিক সময়ে হাসপাতালে আসা এবং দক্ষ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর সেবা পাওয়া গেলে নিরাপদ প্রসব সম্ভব—যতই তা অপ্রত্যাশিত বা জটিল মনে হোক না কেন। মা নেকলেস বেগম এবং তার তিন কন্যা এখন নতুন জীবনের পথে যাত্রা শুরু করেছে, আর তাদের গল্প স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ছে।
Post a Comment