ভৈরবে রেলওয়ে জংশনে ২৮ কেজি গাঁজা উদ্ধার

কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে জংশনে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ গাঁজা উদ্ধার করেছে রেলওয়ে থানা পুলিশ। সোমবার (১১ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টার দিকে স্টেশনের পূর্ব পাশের আউটার সিগন্যাল এলাকা থেকে ২৮ কেজি গাঁজা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে এবং রেলপথে মাদক পাচার নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ জানান, গোপন সূত্রে খবর পাওয়া যায় যে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তঃনগর সোনারবাংলা এক্সপ্রেসে মাদক পাচার হচ্ছে। ট্রেনটি বিরতিহীন হওয়ায় তা সরাসরি ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে থামানো সম্ভব ছিল না। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ট্রেনটি ভৈরব জংশনে থামানো হয়। ঠিক সেই সময় পুলিশ সদস্যরা তৎপর হয়ে ওঠেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে চোরাকারবারিরা ট্রেন থেকে দ্রুত নেমে যায় অথবা চলন্ত অবস্থায় গাঁজার বস্তাগুলো ফেলে দেয়। পরে স্টেশনের পূর্ব পাশের আউটার সিগন্যালের কাছে দুইটি বড় বস্তা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। বস্তাগুলো উদ্ধার করে খোলা হলে ভেতরে ১৪টি পোটলা পাওয়া যায়, যাতে মোট ২৮ কেজি গাঁজা ছিল।

ওসি সাঈদ আহমেদ বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, একটি সংঘবদ্ধ মাদক চক্র চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার দিকে এই মাদক চালান নিয়ে যাচ্ছিল। আমাদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে তারা মালামাল ফেলে পালিয়ে গেছে। তবে কারা এই পাচারের সঙ্গে জড়িত, তা শনাক্তের জন্য তদন্ত শুরু হয়েছে।” তিনি আরও জানান, উদ্ধার করা মাদক জব্দ করে থানায় আনা হয়েছে এবং প্রাথমিকভাবে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই ঘটনায় ইতোমধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। রেলওয়ে পুলিশের পাশাপাশি মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সঙ্গেও সমন্বয় করে অভিযান পরিচালনা করা হবে। ভৈরব জংশন এলাকা রেলপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল হওয়ায় এখানে নিয়মিতভাবে পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন থামে। অপরাধচক্র এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রেলপথ ব্যবহার করে মাদক পরিবহন করে আসছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ায় একাধিক চালান আটক হয়েছে, যা মাদক চক্রের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই ভৈরব ও এর আশপাশের রেলপথ দিয়ে মাদক আসা-যাওয়ার ঘটনা ঘটে আসছে। তবে তা বন্ধে কঠোর নজরদারি ও নিয়মিত অভিযান জরুরি। তারা আরও বলেন, শুধু ট্রেনে তল্লাশি নয়, স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে, যাতে পাচারকারীরা রেলপথকে আর নিরাপদ মনে না করে। ভৈরব পৌর এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, “আমরা প্রায়ই শুনি মাদক আসছে, কখনো ধরা পড়ে, আবার কখনো পালিয়ে যায়। পুলিশ যদি নিয়মিত এমন অভিযান চালায়, তাহলে এই পথ আর ব্যবহার করা সম্ভব হবে না।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, তারা রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে নজরদারি জোরদার করবেন এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মাদক পরিবহনের রুট ম্যাপ তৈরি করবেন, যাতে দ্রুত চক্রের মূল হোতাদের শনাক্ত করা যায়। এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, “আমাদের কাছে কিছু প্রাথমিক তথ্য এসেছে, যা যাচাই-বাছাই চলছে। আমরা আশা করছি, অচিরেই জড়িতদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।”

এই ঘটনার পর থেকে ভৈরব জংশন ও আশপাশের এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। ট্রেন আসা-যাওয়ার সময় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে এবং সন্দেহজনক লাগেজ বা মালপত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, এই ধরনের তৎপরতা অব্যাহত থাকলে রেলপথে মাদক পরিবহন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।

মাদকবিরোধী অভিযান এখন শুধু শহরে নয়, রেলওয়ে ও নৌপথসহ সব ধরনের পরিবহন মাধ্যমেই জোরদার করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ঘোষণা এসেছে, মাদক চক্রের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে এবং কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। ভৈরবের এই ঘটনাটি সেই প্রচেষ্টারই অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা ও স্থানীয় সহযোগিতাও মাদক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Post a Comment

Previous Post Next Post