পাকুন্দিয়ায় মাদরাসা শিক্ষকের ওপর মহিলা ভাইস প্রিন্সিপালের হামলা, উত্তেজনায় শিক্ষার্থীদের অবরোধ

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় এক সহকারী শিক্ষককে পিটিয়েছেন একই প্রতিষ্ঠানের মহিলা ভাইস প্রিন্সিপাল। ঘটনাটি ঘটার পর উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা তাকে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কক্ষে অবরুদ্ধ রাখে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ভাইস প্রিন্সিপালকে উদ্ধার করে।

সোমবার (১৮ আগস্ট) সকালে উপজেলার বুরুদিয়া ইউনিয়নের মিরদী ফাজিল মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটে। এতে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়।


---

ঘটনার শুরু কীভাবে

মাদরাসার সহকারী শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান, সেদিন সকাল ১০টা ১৮ মিনিটে তিনি অফিসকক্ষে প্রবেশ করেন। কিন্তু ভাইস প্রিন্সিপাল আমিরুন্নেসা তাকে অনুপস্থিত হিসেবে হাজিরা খাতায় চিহ্নিত করেন। বিষয়টি নিয়ে আপত্তি করলে প্রথমে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ভাইস প্রিন্সিপাল কাঠের বেঞ্চের টুকরো দিয়ে তাকে আঘাত করতে থাকেন।
এতে শিক্ষক নুরুল ইসলাম মারাত্মকভাবে আহত হন বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘটনাটি দ্রুত মাদরাসা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তারা শিক্ষিকাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে স্লোগান দিতে শুরু করে। এমনকি ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাকে লক্ষ্য করে ডিমও নিক্ষেপ করে।


---

শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ঘটনাস্থলে উপস্থিত শতাধিক শিক্ষার্থী ভাইস প্রিন্সিপালের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করে। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে আসছেন। এবার সহকারী শিক্ষকের ওপর শারীরিক হামলা চালানোয় পরিস্থিতি বিস্ফোরিত হয়।

শিক্ষার্থীরা প্রায় দুই ঘণ্টার বেশি সময় তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে আহুতিয়া পুলিশ ফাঁড়ির একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং তাকে নিরাপদে উদ্ধার করে।


---

ভুক্তভোগী শিক্ষকের অভিযোগ

সহকারী শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, “মাত্র কয়েক মিনিট দেরি করে আসায় ভাইস প্রিন্সিপাল আমার সঙ্গে এমন আচরণ করেছেন। এর আগে তার সঙ্গে অন্যান্য শিক্ষকদেরও ঝামেলা হয়েছে। আমার বাড়িতেও আগুন দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, যা নিয়ে থানায় একটি জিডি করেছি। এবার তিনি সরাসরি শারীরিকভাবে আঘাত করেছেন।”

তার দাবি, ভাইস প্রিন্সিপালের সঙ্গে পূর্ব শত্রুতার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। তিনি প্রশাসনের কাছে ন্যায়বিচার চেয়েছেন।


---

অভিযুক্ত ভাইস প্রিন্সিপালের বক্তব্য

অন্যদিকে অভিযুক্ত ভাইস প্রিন্সিপাল আমিরুন্নেসা ঘটনাটি স্বীকার করলেও ভিন্ন ব্যাখ্যা দেন। তার দাবি, “নুরুল ইসলাম প্রথমে আমার প্রতি চড়াও হন। আমি আত্মরক্ষার জন্য তাকে আঘাত করি। পরে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে গেলে পাশের একটি কক্ষে আশ্রয় নিই।”

তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার বিরুদ্ধে উসকানি পেয়েছে।


---

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ

আহুতিয়া তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তফা কামাল বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাইস প্রিন্সিপালকে উদ্ধার করা হয়। “আমরা প্রত্যক্ষদর্শী এবং শিক্ষকদের জবানবন্দি নিয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার পর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

তিনি আরও জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং মাদরাসা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।


---

প্রতিষ্ঠানে উত্তেজনা বিরাজ

ঘটনার পর মাদরাসা এলাকায় এখনও উত্তেজনা বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা দাবি তুলেছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মর্যাদা বজায় রাখতে প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় তারা আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।


---

শিক্ষকদের মধ্যে বিভক্তি

প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক জানান, ভাইস প্রিন্সিপাল আমিরুন্নেসার সঙ্গে সহকর্মীদের দীর্ঘদিন ধরে টানাপোড়েন চলছে। তিনি প্রায়ই বিভিন্ন সিদ্ধান্তে এককভাবে হস্তক্ষেপ করেন এবং মতবিরোধ দেখা দেয়। এ ঘটনার মাধ্যমে সেই অসন্তোষ চরমে পৌঁছেছে।


---

সমাজের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় অভিভাবক ও এলাকাবাসী ঘটনাটিকে দুঃখজনক হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, শিক্ষক সমাজের অভিভাবক। সেখানে যদি এমন শারীরিক সংঘর্ষ ঘটে, তাহলে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে? তারা দ্রুত তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।


---

ভবিষ্যতের করণীয়

শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ঘটনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তাই প্রশাসনের উচিত দ্রুত তদন্ত শেষ করে দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনা।

Post a Comment

Previous Post Next Post