কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার কমলপুর বাল্লাবিলে একটি প্রভাবশালী ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে জমি দখল, চাঁদাবাজি ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ করেছেন ইতালি প্রবাসী নারী মোমেনা আক্তার নীলি। সোমবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে স্থানীয় এলাকায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ তুলে ধরে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
প্রবাসী নারী জানান, তার ক্রয়কৃত এবং দীর্ঘদিন ভোগদখলকৃত জমিতে আদালতের বৈধ অনুমতি নিয়ে সম্প্রতি নির্মাণকাজ শুরু করলে চক্রটি প্রথমে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। দাবিকৃত অর্থ না দেওয়ায় ভূমিদস্যুরা নির্মাণাধীন স্থাপনা ভাঙচুর করে এবং তাকে ও তার পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
---
৪০ বছর ধরে ভোগদখলে থাকা জমি নিয়ে বিরোধ
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মোমেনা আক্তার নীলি বলেন, তার বাবা হাজী জহির উদ্দিন একজন শিক্ষানুরাগী ও সমাজের সুনামধন্য ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ১৯৮৬ সালে শামসুল হক চৌধুরীর কাছ থেকে সোয়া ২১ শতাংশ, ১৯৮৭ সালে আজিজুল হক চৌধুরীর কাছ থেকে পৌনে ১৬ শতাংশ এবং ২০০৮ সালে তিন বোনের কাছ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। মোট সাড়ে ৪২ শতাংশ জমি তিনি ভোগদখল করেন।
২০০৮ সালে মোমেনা আক্তার নীলি তার বাবার কাছ থেকে জমিটি নিজের নামে কিনে নেন। এরপর সেখানে মার্কেট ও দোকান নির্মাণ করে ভোগদখল বজায় রেখেছিলেন। কিন্তু তিনি পরিবারসহ ইতালিতে থাকার সুযোগে একটি প্রভাবশালী মহল চক্রান্ত করে জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে।
---
চাঁদা দাবি ও হামলার অভিযোগ
মোমেনা আক্তারের অভিযোগ, ভূমিদস্যু চক্রের সদস্যরা হলেন—রফিক, কাউসার, মোজাম্মেল, জাকির, সবুজ সরকার, কবির মিয়া ওরফে পান কবির, ফারুক এবং দালাল সুমন রেফারি। গত ২২ জুলাই এসব আসামি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নির্মাণাধীন দেয়ালে হামলা চালায় ও তা ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় তিনি ভৈরব থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু অভিযোগ করার পর থেকে নিয়মিত হুমকি ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে চক্রটি।
তিনি আরও জানান, গত ১৪ আগস্ট উল্টো ওই সিন্ডিকেট ভৈরব প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভুয়া অভিযোগ তোলে। উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের অপকর্ম ঢেকে প্রবাসী পরিবারটিকে সমাজের কাছে বিতর্কিত করে তোলা।
---
প্রবাসী পরিবারের সামাজিক অবস্থান
সংবাদ সম্মেলনে নীলি বলেন, তার স্বামী হাজী মো. জসিম উদ্দিন প্রবাসে অবস্থান করেও শিক্ষা ও সমাজসেবায় অবদান রেখে চলেছেন। তিনি ইতালির রোম শহরে স্কুল ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। পাশাপাশি একটি অনলাইন পত্রিকার চেয়ারম্যান এবং মানবাধিকার সংগঠনের সক্রিয় সদস্য হিসেবেও কাজ করছেন। অথচ তাকে নিয়েই নানা কুৎসা রটানো হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, ভূমিদস্যুরা শুধু তার জমিই নয়, কমলপুর বাল্লাবিল এলাকার সরকারি জমিও জবরদখল করছে। তারা মাটি ভরাট, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ এবং আশপাশের বহু মানুষের জমি দখল করছে। এসব কর্মকাণ্ডে একটি প্রভাবশালী মহল তাদের মদদ দিচ্ছে বলে দাবি করেন নীলি।
---
আইনগত সুরক্ষা চাইলেন প্রবাসী নারী
সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী নারী প্রশাসনের কাছে তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে বৈধভাবে জমি ভোগদখল করছি। আদালতের অনুমতি নিয়েও যখন কাজ করতে পারছি না, তখন সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ কোথায়? প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিলে আমরা হয়তো স্বস্তি ফিরে পাব।”
এ সময় তিনি ভূমিদস্যু চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি তার বৈধ জমি সুরক্ষার দাবি জানান।
---
স্থানীয়দের সংহতি
সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় বাসিন্দা সাহাদাৎ হোসেন, মো. চুন্নু মিয়া, সাবেক ইউপি সদস্য তৌহিদুর রহমান ও মোহাম্মদ আলীসহ অনেকে বক্তব্য দেন। তারা বলেন, প্রবাসী পরিবারটি বহু বছর ধরে শান্তিপূর্ণভাবে জমি ভোগদখল করছে। সম্প্রতি কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি তাদের হয়রানি করার জন্য মিথ্যাচার ছড়াচ্ছে।
স্থানীয় শতাধিক নারী-পুরুষ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে প্রবাসী নারীর অভিযোগের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। তারা প্রশাসনের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান।
---
সমাজে আলোচনার ঝড়
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভৈরবের কমলপুর এলাকায় তীব্র আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। সাধারণ মানুষ মনে করছে, প্রবাসীরা দেশে বিনিয়োগ ও উন্নয়ন করতে চাইলে এ ধরনের ভূমিদস্যুতার কারণে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।
ভুক্তভোগী প্রবাসী নারীর দাবি, প্রশাসন যদি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে শুধু তার পরিবারের নয়, পুরো এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলাও হুমকির মুখে পড়বে।
Post a Comment