করিমগঞ্জে ইসিএ গ্রুপের উদ্যোগে ‘চুই ঝালের চত্বর’ উদ্বোধন:

নিজস্ব প্রতিবেদক, করিমগঞ্জ
স্বনির্ভর অর্থনীতির লক্ষ্যকে সামনে রেখে করিমগঞ্জে যাত্রা শুরু করল ইসিএ (Education for Change & Action) গ্রুপের দ্বিতীয় স্বনির্ভর প্রকল্প ‘চুই ঝালের চত্বর’। মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ৭ জুলাই, বৃহস্পতিবার, প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায়।

দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে ইসিএ গ্রুপের এই প্রকল্পে শুরু থেকেই তরুণদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ করা গেছে। উদ্বোধনের দিন মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়, যা পরিচালনা করেন হাফেজ আবু ইউসুফ সোহাগ, ইমাম জাফরাবাদ আদর্শ নূরানী জামে মসজিদ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসিএ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মো. সালাউদ্দিন আহমেদ এবং সঞ্চালনায় ছিলেন হিমন শাহরিয়ার। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডা. আলভি আরাফাত, ইনডোর মেডিকেল অফিসার, শিশু বিভাগ, প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। তিনি বলেন, “ইসিএ গ্রুপের মতো শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ আমাদের সমাজের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। আমি আশা করি এই উদ্যোগ দেশের প্রতিটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সার্জারি বিভাগের ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা. আমানুল্লাহ তপু, এবং ইসিএ গ্রুপের মেডিকেল শাখার বিভিন্ন সদস্যবৃন্দ।

শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাশ্রমে গড়া একটি উদাহরণ

ইসিএ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মো. সালাউদ্দিন আহমেদ জানান, “দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন। আমাদের উদ্দেশ্য কেবল শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা নয়, বরং সমাজে কার্যকর পরিবর্তন আনাও আমাদের লক্ষ্য।” তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের প্রকল্প দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

সংগঠনের কো-ফাউন্ডার জুবায়ের হাসান সাকিব বলেন, “বর্তমানে দেশের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। তাদের যদি দক্ষ ও কর্মক্ষম জনশক্তিতে রূপান্তর করা যায়, তাহলে আমাদের দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন অনেক গতি পাবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “ইসিএ গ্রুপ কেবল একটি শিক্ষার্থী সংগঠন নয়, এটি একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম যেখানে বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।”

শুধু হোটেল নয়, একটি সামাজিক আন্দোলনের সূচনা

‘চুই ঝালের চত্বর’ প্রকল্পটিকে কেবলমাত্র একটি হোটেল বা খাবারের দোকান হিসেবে না দেখে, অনেকেই একে একটি “সামাজিক বিপ্লবের সূচনা” হিসেবে দেখছেন। কারণ, এখানে প্রতিদিনের আয়ের একটি অংশ সমাজের অসহায় ও দরিদ্র মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে ইসিএ গ্রুপ।

তরুণদের এই উদ্যোগ নতুনভাবে সমাজকে ভাবতে শিখিয়েছে। তারা দেখিয়েছে, কেবল সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার ওপর নির্ভর না করে, সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি এবং শিক্ষার্থীরাও চাইলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

ইসিএ গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আরও কয়েকটি এ ধরনের দোকান চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিটি দোকান হবে আত্মনির্ভরশীল একটি মডেল, যেখানে শুধু আয় নয়, সমাজ সচেতনতাও গুরুত্ব পাবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের স্বতঃপ্রণোদিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই প্রকল্পকে একটি জাতীয় মডেল হিসেবে দাঁড় করানোর লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে ইসিএ গ্রুপ।


ইসিএ গ্রুপের ‘চুই ঝালের চত্বর’ শুধুমাত্র একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়, বরং এটি শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত একটি সমাজ উন্নয়ন প্রকল্প। এই ধরনের স্বনির্ভর উদ্যোগ বাংলাদেশের তরুণ সমাজের সম্ভাবনাকে নতুনভাবে উপস্থাপন করছে। উদ্বোধনী দিনের বক্তব্য, দোয়া মাহফিল ও উপস্থিতদের আগ্রহ প্রমাণ করেছে, এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে স্থানীয় সমাজ ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে।

Post a Comment

Previous Post Next Post