কিশোরগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে ব্যাপক রদবদল: বদলি হলেন ৭৪ ইউপি সচিব ও ৪০ কম্পিউটার অপারেটর

নিজস্ব প্রতিবেদক, কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জ জেলার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) পর্যায়ে দেখা গেছে নজিরবিহীন এক প্রশাসনিক রদবদল। স্থানীয় সরকার বিভাগ জেলার ৭৪ জন ইউপি সচিব এবং ৪০ জন হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরকে একযোগে বদলির নির্দেশ দিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই নতুন কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বদলির এ সিদ্ধান্তকে জেলা পর্যায়ে প্রশাসনিক কর্মপ্রবাহে গতি আনতে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন একই স্থানে কর্মরত থাকা ব্যক্তিদের বদলি করে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং কাজের কার্যকারিতা নিশ্চিত করাই এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।

বদলি আদেশ কার্যকর হচ্ছে দ্রুত

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কিশোরগঞ্জের মোট ১৩টি উপজেলায় বর্তমানে ১০৮টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এর মধ্যে ৭৪ জন ইউপি সচিবকে সম্প্রতি বদলি করে নতুন স্থানে দায়িত্ব গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে, জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কর্মরত ৪০ জন কম্পিউটার অপারেটরকেও বদলি করা হয়েছে। ইউপি সচিবদের আগামী ১২ আগস্ট, এবং কম্পিউটার অপারেটরদের ১৪ আগস্টের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে।

বদলিকৃতদের অনেকে কেবল ইউনিয়ন নয়, তাদের উপজেলা স্তরেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে এক উপজেলার কর্মী অন্য উপজেলায় দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাচ্ছেন। এতে করে নতুন পরিবেশে কাজ করার সুযোগ যেমন সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি আগের কর্মস্থলের সঙ্গে গড়ে ওঠা কোনো প্রভাব বা অনিয়ম দূর করার পথও খুলে যাচ্ছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্ট মহলের।

সময়মতো যোগদান না করলে শাস্তির মুখে

স্থানীয় সরকার বিভাগের জারি করা বদলি আদেশে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্দেশিত সময়ের মধ্যে যোগদান না করলে সংশ্লিষ্টদের "অবমুক্ত" হিসেবে বিবেচনা করা হবে। অর্থাৎ, সময়মতো দায়িত্ব গ্রহণে ব্যর্থ হলে তা চাকরি থেকে স্বয়ংক্রিয় অব্যাহতির শামিল হবে।

প্রশাসনিক স্বার্থে স্বচ্ছতা আনতে এ সিদ্ধান্ত

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদ হাছান খান বলেন, “দীর্ঘদিন একই স্থানে দায়িত্ব পালন করা অনেকেই স্থানীয়ভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়েন। এতে প্রশাসনিক কাজের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা ব্যাহত হয়। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা সমন্বিত বদলির উদ্যোগ নিয়েছি।”

তিনি আরও জানান, “এই রদবদলের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ জেলার স্থানীয় সরকার প্রশাসনে নতুন গতি আসবে। আমাদের প্রত্যাশা, এই সিদ্ধান্ত মাঠপর্যায়ে সেবা প্রদানে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

মাঠপর্যায়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

এমন রদবদলের খবরে বিভিন্ন ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে ভিন্নমুখী প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ স্বাগত জানালেও, অনেক সচিব ও অপারেটররা হঠাৎ করে নতুন স্থানে বদলির বিষয়ে কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে তারা আশ্বস্ত হয়েছেন যে, এ বদলির পেছনে কোনো ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য নয়, বরং এটি একটি সার্বিক প্রশাসনিক পরিকল্পনার অংশ।

একজন ইউনিয়ন সচিব, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বলেন, “আমি এক ইউনিয়নে প্রায় সাত বছর ধরে কর্মরত ছিলাম। হঠাৎ করে বদলির আদেশে একটু অসুবিধা হবে বটে, তবে নির্দেশ মেনে কাজ করাই আমাদের দায়িত্ব।”

অন্যদিকে, কিছু ইউনিয়নে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বদলিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। এক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জানান, “নতুন সচিব এলে নতুন উদ্যমে কাজের গতি বাড়বে। পুরনোদের অনেক সময় উদাসীনতা দেখা দেয়, যা জনগণের সেবা প্রদানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।”

প্রযুক্তির সহায়তায় সেবায় গতি আনতে চায় স্থানীয় সরকার বিভাগ

বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদে ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করতে কম্পিউটার অপারেটরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব অপারেটরের মাধ্যমে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ভাতা যাচাই, অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া, ট্র্যাকিংসহ নানা সেবা পরিচালিত হচ্ছে। একযোগে ৪০ জন অপারেটরের বদলি এই ব্যবস্থার আরও আধুনিকীকরণে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Post a Comment

Previous Post Next Post