কিশোরগঞ্জে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমানের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা। রোববার (২৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজন করা এক কর্মসূচিতে ফজলুর রহমানের ছবিতে গণজুতা নিক্ষেপ করা হয়। একই সঙ্গে তাকে জেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
বক্তব্যের প্রেক্ষাপট
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে, যখন ফজলুর রহমান এক বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে জামায়াতে ইসলামীকে ‘কালো শক্তি’ এবং তাদের সহযোগীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ আখ্যা দেন। পাশাপাশি তিনি দাবি করেন, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পেছনে মূলত জামায়াত-শিবিরের ষড়যন্ত্র দায়ী। তাঁর এই মন্তব্য কিশোরগঞ্জের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
কর্মসূচিতে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ফজলুর রহমানের মন্তব্যকে অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও কল্পনাতীত বলে অভিহিত করেন। ছাত্র খলিলুর রহমান বলেন, “ফজলুর রহমানের বক্তব্য আমাদের জন্য unacceptable। আমরা চাই, তাকে শোকজ করা হোক এবং কিশোরগঞ্জে তার কার্যক্রম বন্ধ করা হোক।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাতুল নাহিদ ভূঁইয়া বলেন, “এরকম বক্তব্য কোনো শিক্ষার্থী বা সাধারণ নাগরিক সহ্য করতে পারবে না। আমরা তাই তাকে কিশোরগঞ্জে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি হলে আরও কঠোর কর্মসূচি নেওয়া হবে।”
কর্মসূচির বিশদ
রোববারের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা শাখার সাবেক আহ্বায়ক হাফেজ ইকরাম হোসেন, সাবেক সদস্যসচিব ফয়সাল প্রিন্স, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাতুল নাহিদ ভূঁইয়া, ওয়ারিয়র্স অব জুলাই মুখপাত্র মানস সরকার উৎস, সাবেক মুখপাত্র সাবিরুল হক তন্ময়, সাবেক যুগ্ম সদস্যসচিব শামসুর রহমানসহ অসংখ্য ছাত্র ও সাধারণ জনগণ। তারা একযোগে ফজলুর রহমানের ছবিতে জুতাপেটা দেন এবং জেলায় তার প্রবেশ নিষিদ্ধের দাবিতে স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক ও নৈতিক মূল্যবোধ রক্ষার জন্য এ ধরনের কর্মসূচি আয়োজন করেছেন। তাঁদের দাবি, রাজনৈতিক নেতাদের উচিত সবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও দায়িত্বশীল হওয়া। কোনো নেতার বক্তব্যে সামাজিক বিভেদ বা বিতর্ক সৃষ্টি হলে তা জাতির ক্ষতি করে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট
ফজলুর রহমানের মন্তব্যের ফলে কিশোরগঞ্জে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, জনপ্রতিনিধি বা রাজনৈতিক নেতাদের মন্তব্য যদি জাতির বৃহত্তর স্বার্থের সঙ্গে খাপ না খায়, তবে সাধারণ জনগণ এবং শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়া দেখাতে বাধ্য হন। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা যখন সক্রিয় নাগরিক হিসেবে নিজেদের অধিকার ও নৈতিক দায়িত্ব পালন করে, তখন তা স্থানীয় রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলে।
ভবিষ্যৎ কর্মসূচি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা শাখার নেতারা জানিয়েছেন, তারা নিয়মিতভাবে নৈতিক মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। এ ধরনের কর্মসূচি যাতে শান্তিপূর্ণ ও সংবিধান সম্মত হয়, তা নিশ্চিত করতে তারা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রাখবেন।
উপসংহার হিসেবে বলা যায়, কিশোরগঞ্জে শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচি রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যের সঙ্গে সামাজিক প্রতিক্রিয়ার সরাসরি প্রতিফলন। শিক্ষার্থীরা এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ববোধের প্রতিমূর্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করছে। প্রশাসনও জানিয়েছেন, সকল পক্ষকে শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের বক্তব্য প্রকাশ করার সুযোগ নিশ্চিত করতে তারা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
Post a Comment