ইটনায় ইউএনওর বাসভবনে হামলা মামলায় উপজেলা ছাত্রদল আহ্বায়ক গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সরকারি বাসভবনে হামলা ও হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আজাদুর রহমান সুজনকে (৩০) গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। শুক্রবার (২২ আগস্ট) গভীর রাতে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বনানী মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। শনিবার (২৩ আগস্ট) সকালে র‌্যাব-১৪, সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্প এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

হামলার ঘটনা

র‌্যাবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শতাধিক লোকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে অতর্কিতে হামলা চালায়। এসময় বাসভবনের গেট ভাঙচুর, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুর চালানো হয়, যার ফলে প্রায় এক লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। শুধু সম্পত্তিই নয়, হামলাকারীরা দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের ওপরও মারাত্মকভাবে আক্রমণ চালায়। তাদের মধ্যে কয়েকজন গুরুতর জখম হন।

হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়। এ ছাড়া আনসার সদস্যদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয় বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

মামলা ও তদন্ত

পরদিন ১৪ আগস্ট এক আনসার সদস্য বাদী হয়ে ইটনা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটিতে ৪২ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং অজ্ঞাত ২০০–৩০০ জনকে আসামি করা হয়। মামলা নম্বর-০২/২০২৫ এ উল্লেখ করা হয়েছে যে হামলার সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা জড়িত ছিলেন।

মামলা দায়েরের পর থেকেই র‌্যাব আসামিদের ধরতে ছায়াতদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে মামলার ৪ নম্বর আসামি আজাদুর রহমান সুজনকে আটক করা হয়।

র‌্যাবের বক্তব্য

র‌্যাব-১৪, সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের অধিনায়ক মো. আশরাফুল কবির বলেন, “আমরা তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে আসামির অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হই। পরে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বনানী মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কিশোরগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের জন্য র‌্যাব ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন

ইউএনওর বাসভবনে হামলার ঘটনায় স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা প্রশ্নে সাধারণ মানুষও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একটি নির্বাচিত সরকারব্যবস্থায় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ওপর এ ধরনের হামলা কেবল আইনের শাসনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দেয়।

স্থানীয় রাজনৈতিক মহলেও বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থে পরিকল্পিতভাবেই এ হামলা চালানো হয়েছে। আবার অনেকে বলছেন, এই ঘটনায় সাধারণ নেতাকর্মীরা উসকানির শিকার হয়েছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করে, যেভাবেই হোক না কেন, এ ধরনের হামলা একটি গুরুতর অপরাধ, যার বিচার অবশ্যই হওয়া উচিত।

এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া

হামলার ঘটনার পর থেকেই ইটনা এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই বলেছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের মতো সুরক্ষিত স্থানে হামলা হলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কতটা ঝুঁকিতে রয়েছে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। স্থানীয় শিক্ষক আমিরুল ইসলাম বলেন, “ইউএনও সাহেবের বাসায় হামলা হয়েছে শুনে আমরা ভীত হয়ে পড়েছি। প্রশাসনের ওপর হামলা হলে জনগণের নিরাপত্তা কার হাতে?”

Post a Comment

Previous Post Next Post