কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ,

কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে রোববার (২৪ আগস্ট) সকাল থেকে অস্থায়ী ক্যাম্পাসের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। বিক্ষোভের সময় তারা প্রতীকীভাবে মুলা হাতে নিয়ে প্রশাসনের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থীদের ঘোষণা—দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম শাটডাউন থাকবে।

---

ছয় দফা দাবি

শিক্ষার্থীরা যে ছয়টি দাবি উত্থাপন করেছেন তা হলো—
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম নতুন ও স্বাধীন স্থানে স্থানান্তর করা,
২. অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের অধীনে না রেখে প্রশাসনিক স্বাতন্ত্র্য নিশ্চিত করা,
৩. পর্যাপ্ত ক্লাসরুম ও আধুনিক ল্যাবরেটরি স্থাপন,
৪. মানসম্মত স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা চিকিৎসা সেবা চালু,
৫. শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর প্রক্টরিয়াল বডি গঠন,
৬. দ্রুত খেলার মাঠের ব্যবস্থা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে অবকাঠামোগত সংকট, পাঠদানের অনুপযুক্ত পরিবেশ এবং নিরাপত্তাহীনতা তাদের পড়াশোনার পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।


---

শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী জাহিদুল আবেদিন নাফছি জানান, অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম বা ল্যাব না থাকায় নিয়মিত পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। একই সঙ্গে সরকারি বিভিন্ন পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হওয়ায় অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম আরও পিছিয়ে যাচ্ছে। এতে সেশনজট তৈরি হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা সময়মতো ডিগ্রি শেষ করতে পারছেন না। তার ভাষায়, “আমরা আর অস্থায়ী সমাধান চাই না, আমাদের স্থায়ী ক্যাম্পাস দ্রুত প্রয়োজন।”


---

আন্দোলনের পটভূমি

এর আগে বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন শুরু করেন এবং সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন। শনিবার (২৩ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও মানববন্ধনে অংশ নিয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা ও সংকট সমাধানের দাবি জানান। শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রশাসন ও শিক্ষকদের সমর্থন তাদের আন্দোলনকে আরও বেগবান করেছে।


---

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নায়লা ইয়াছমীন জানান, সমস্যার দ্রুত সমাধানে শিক্ষা সচিবের সঙ্গে বৈঠক চলছে। তবে শিক্ষার্থীদের শাটডাউন কর্মসূচির কারণে রবিবার কোনো ক্লাস কিংবা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সংকট নিরসন হবে।


---

সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অনেক শিক্ষার্থী বলেন, অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। একজন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় নামের সঙ্গে মর্যাদা জড়িত থাকে। কিন্তু আমাদের প্রতিষ্ঠান এখন ছাত্রছাত্রীদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা চাই আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আর কেউ খেলুক না।”


---

শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকদের উদ্বেগ

শিক্ষাবিদরা বলছেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বছরের পর বছর কার্যক্রম চালানো শিক্ষার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। অভিভাবকদের মধ্যে আশঙ্কা—দাবি পূরণে দেরি হলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

স্থানীয় অভিভাবক মাহমুদুল হাসান বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবি অযৌক্তিক নয়। যদি দ্রুত সমাধান না হয়, তবে এটি তাদের একাডেমিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

Post a Comment

Previous Post Next Post