শিক্ষকদের পদোন্নতি জরুরি, প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের পদোন্নতি দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকলেও এটি বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, পদোন্নতি বিলম্বিত হলেও গ্রেড একই থাকায় প্রশাসনিক কাঠামো বা চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়বে না।

শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে প্রাথমিক শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বদলির চ্যালেঞ্জ ও সামাজিক বাস্তবতা

উপদেষ্টা হাওর ও চরাঞ্চলে শিক্ষকরা থাকতে না চাওয়ার বিষয়টি সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, “এটা কেবল আমাদের প্রশাসনিক সমস্যা হলে সমাধান সহজ হতো। কিন্তু বদলির তদবির অনেক সময় ওপর থেকে আসে, যা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবুও আমরা চেষ্টা করছি এসব সমস্যার সমাধান করতে।”

তিনি আরও বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা যেন মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেজন্য শিক্ষকদের মাঠপর্যায়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। বদলির অনিয়ম ও প্রভাবমুক্ত থেকে শিক্ষার্থীর কল্যাণে কাজ করা এখন সময়ের দাবি।

শিক্ষকদের নীতি-নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধের আহ্বান

দিনের শুরুতে সকাল ১০টায় আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা শিক্ষকদের নীতি-নৈতিকতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “শিক্ষকরা যদি নিজেরা সততা, নৈতিকতা ও দায়িত্বশীলতার উদাহরণ স্থাপন করেন, তাহলে শিক্ষার্থীরাও সেভাবেই বেড়ে উঠবে। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এবং শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা যত বাড়বে, ততই প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার মান উন্নত হবে।

উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ

অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান, পরিচালক (এনডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান, জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাসহ প্রায় তিন শতাধিক প্রধান শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

সভায় শিক্ষকরা মাঠপর্যায়ের নানা সমস্যা, পদোন্নতি, বদলি, অবকাঠামো সংকট এবং শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত চাহিদা পূরণের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন। অনেক শিক্ষক জানান, দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি না হওয়ায় অনেকেই পেশাগত প্রণোদনা হারাচ্ছেন। এতে কর্মক্ষেত্রে উৎসাহ কমে যাচ্ছে, যা শিক্ষার মানে প্রভাব ফেলছে।

পদোন্নতির গুরুত্ব

শিক্ষাবিদরা মনে করেন, পদোন্নতি শুধু আর্থিক সুবিধার বিষয় নয়, বরং শিক্ষকদের মর্যাদা ও কর্মপ্রেরণার সঙ্গেও জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে একই পদে থেকে শিক্ষকরা হতাশ হয়ে পড়েন, যা তাদের কাজের দক্ষতাকে ব্যাহত করে। এ অবস্থায় পদোন্নতি হলে শুধু শিক্ষকদের মনোবল বাড়বে না, বরং প্রাথমিক শিক্ষায় গুণগত মানও উন্নত হবে।

উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এ বিষয়ে বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি শিক্ষকদের পদোন্নতি নিশ্চিত হলে মাঠপর্যায়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। এজন্য কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করি শিগগিরই এ বিষয়ে অগ্রগতি হবে।”

Post a Comment

Previous Post Next Post