কিশোরগঞ্জের ভৈরবে খাদ্য নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের দায়ে দুটি প্রতিষ্ঠানকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ফ্রিজে রান্না করা খাবারের সঙ্গে কাঁচা মাছ সংরক্ষণ এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিশু খাদ্য উৎপাদনের অপরাধে এ দণ্ড দেওয়া হয়।
শনিবার (২৩ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শহরের দুর্জয় মোড় বাসস্ট্যান্ড ও স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। কিশোরগঞ্জ বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম তালুকদার, জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর শংকর চন্দ্র পালসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
হোটেলের ফ্রিজে রান্না করা খাবারের সঙ্গে কাঁচা মাছ
অভিযানের সময় দেখা যায়, ভৈরবের দুর্জয় মোড় এলাকায় অবস্থিত আল আজিজিয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের ফ্রিজে রান্না করা বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে কাঁচা মাছ একসঙ্গে রাখা হয়েছে। খাদ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এ ধরনের অনিয়ম স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। কাঁচা মাছ বা মাংসের সঙ্গে রান্না করা খাবার রাখলে সহজেই ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে যেতে পারে, যা খাবার বিষক্রিয়া ঘটাতে সক্ষম। এ অপরাধে রেস্টুরেন্ট মালিককে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিশু খাদ্য উৎপাদন
একই অভিযানে শহরের স্টেডিয়াম এলাকার একটি প্রতিষ্ঠানে অনুমোদন ছাড়াই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিশু খাদ্য উৎপাদনের প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটিতে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য জব্দ করে তা ধ্বংস করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিককে নিরাপদ খাদ্য আইনে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আদালত জানিয়েছে, শিশুদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি খাবার অনিরাপদ পরিবেশে উৎপাদন করা গুরুতর অপরাধ, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্যঝুঁকিকে বাড়িয়ে তোলে।
আদালতের সতর্কবার্তা
অভিযান শেষে কিশোরগঞ্জ বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “ফ্রিজে রান্না করা খাবারের সঙ্গে কাঁচা মাছ রাখা কিংবা অনুমোদনবিহীনভাবে অস্বাস্থ্যকর শিশু খাদ্য উৎপাদন—দুটিই অপরাধ। এজন্য দুটি প্রতিষ্ঠানকে মোট দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ধরনের অভিযান নিয়মিত চলবে। কোনো প্রতিষ্ঠানই ছাড় পাবে না।”
তিনি আরও বলেন, জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে জেলা প্রশাসন ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযানে কঠোর অবস্থানে থাকবে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকাবাসী আদালতের এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অনেক রেস্টুরেন্ট ও খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মানে না। ফলে তারা প্রায়ই ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের শিকার হন। প্রশাসনের এ ধরনের অভিযান নিয়মিত হলে প্রতিষ্ঠানগুলো আরও সতর্ক হবে বলে তাদের বিশ্বাস।
ভৈরবের বাসিন্দা সালমা আক্তার বলেন, “আমরা প্রায়ই বাইরে থেকে খাবার কিনে খাই। কিন্তু এই খবর শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। আমাদের বাচ্চাদের জন্য যে খাবার কিনি, তা যদি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হয়, তাহলে তো ভয়ঙ্কর ব্যাপার। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ থাকবে যেন নিয়মিত অভিযান চালানো হয়।”
খাদ্য নিরাপত্তা আইন ও সচেতনতা
খাদ্য নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিরাপদ খাদ্য আইন অনুযায়ী প্রতিটি খাদ্য উৎপাদন ও পরিবেশনকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা বাধ্যতামূলক। রান্না করা খাবারের সঙ্গে কাঁচা মাছ, মাংস বা অন্যান্য কাঁচা উপকরণ রাখা আইনত অপরাধ। একইভাবে অনুমোদন ছাড়া শিশু খাদ্য তৈরি করাও গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
পুষ্টিবিদদের মতে, অনিরাপদ ও ভেজাল খাদ্য কেবল সাময়িক অসুস্থতার কারণ হয় না, বরং দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসার, কিডনির সমস্যা ও হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তাই খাদ্য উৎপাদনকারী ও রেস্টুরেন্ট মালিকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভৈরবসহ কিশোরগঞ্জের অন্যান্য উপজেলাতেও নিয়মিতভাবে এ ধরনের অভিযান চালানো হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান আইন অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ভোক্তাদেরও অনুরোধ জানানো হয়েছে, কোথাও খাদ্য নিরাপত্তা আইন ভঙ্গ হতে দেখলে যেন তারা প্রশাসনকে তাৎক্ষণিকভাবে জানায়।
Post a Comment