জয়নাল আবেদীন রিটন, ভৈরব থেকে
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে দুইটি পিও যান্ত্রিক জুতার কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৩০ আগস্ট) রাত পৌনে ৯টার দিকে পৌর এলাকার লক্ষীপুরের উসমান মোল্লার মার্কেটে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট টানা আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও এর আগেই দুটি কারখানার সব মালামাল, যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ চার কোটি টাকার বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রথমে বন্ধ থাকা চেইঞ্জ পিও ফুটওয়্যার কারখানার অফিস কক্ষে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই আগুন পাশের ঈগল পিও ফুটওয়্যার কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। কারখানা দুটিতে বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি থাকায় আগুন দ্রুত দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। খবর পেয়ে ভৈরব বাজার ও ভৈরব নদী ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযান চালায়। প্রায় দেড় ঘণ্টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পরবর্তীতে আরও এক ঘণ্টা ডাম্পিংয়ের কাজ চালিয়ে আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ করা হয়।
অগ্নিকাণ্ডের সময় ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে। তবে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
ঈগল ফুটওয়্যারের পরিচালক সোহাগ মিয়া বলেন,
> “প্রথমে পাশের চেইঞ্জ ফুটওয়্যার অফিস থেকে ধোঁয়া উঠে আসতে দেখি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন আমাদের কারখানাতেও ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস দ্রুত এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে, কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গেছে। শীত মৌসুমের জন্য আনা বিপুল পরিমাণ মালামাল, চামড়া, রাবার ও মেশিন—সবই পুড়ে গেছে। প্রায় চার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।”
একইভাবে কারখানাগুলোর মালিক সমিতির সভাপতি আলামিন মিয়া জানান,
> “আগুনের খবর শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। ফায়ার সার্ভিস অনেক চেষ্টা করেও কারখানা বাঁচাতে পারেনি। অন্তত চার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। আমাদের বারবারই আগুনে ক্ষতি হচ্ছে, কিন্তু সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পাই না।”
অন্যদিকে, ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউস পরিদর্শক আজিজুল হক রাজন বলেন,
> “রাত ৯টার দিকে আগুনের খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। ধোঁয়ার কারণে আগুন নেভাতে কিছুটা সময় লেগেছে। দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি এবং আরও এক ঘণ্টা ডাম্পিংয়ের কাজ করি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ তদন্ত ছাড়া নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না।”
এলাকাবাসী জানায়, ঘটনাস্থলে কারখানার আশপাশে ভিড় জমে যায়। অনেকে বালতি ও পাইপ দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালালেও কোনোভাবেই আগুনের গতি কমানো সম্ভব হয়নি। কারণ ভেতরে জুতা তৈরির কেমিক্যাল, সল্যুশন ও দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এত বেশি হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, নিয়মিত নজরদারি ও ফায়ার সেফটির ব্যবস্থা থাকলে এত বড় ক্ষতি হতো না।
ভৈরবের শিল্প ও ব্যবসায়ী মহল বলছেন, এই অগ্নিকাণ্ড শুধু দুই কারখানার মালিকের ক্ষতিই নয়, কর্মচারী ও শ্রমিকদের জীবিকায়ও বিরূপ প্রভাব ফেলবে। প্রতিদিন শতাধিক শ্রমিক এই দুই কারখানায় কাজ করতেন। আগুনে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের অনেকে বেকার হয়ে পড়বেন।
প্রসঙ্গত, ভৈরব শহর ও এর আশপাশে জুতা শিল্পের বড় বাজার গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখানকার তৈরি জুতা পাঠানো হয়। তাই এই অগ্নিকাণ্ডকে স্থানীয়রা একটি বড় শিল্পক্ষতির ঘটনা হিসেবে দেখছেন।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, আগুনে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত হিসাব এবং কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
Post a Comment