গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলাটি ছিল সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত এবং তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এটি সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রোববার (৩১ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত নুরকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান।
‘টার্গেট করে হত্যার চেষ্টা’
রিজভী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন,
> “৫ আগস্টের পর যে পরিবর্তিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় নুরুল হকের ওপর এই পৈশাচিক হামলা চালানো হলো। তাকে টার্গেট করে আঘাত করা হয়েছে, উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্টভাবে মেরে ফেলা। শরীরের যেসব অংশে আঘাত করা হয়েছে, সেগুলো সামান্য এদিক-ওদিক হলে তার মৃত্যু অনিবার্য ছিল।”
তিনি আরও বলেন, নুরুল তখন শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। কোনো ধরনের সহিংসতা ঘটেনি। “গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিবাদ করা নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। সে যত বড় অপরাধীই হোক না কেন, এভাবে হামলা করা যায় না।”
‘এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা ঘটনাটিকে একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে আখ্যা দেন। তার ভাষায়,
> “গণ অধিকারের অফিসে ঢুকে এভাবে রক্তাক্ত করা নিছক দুর্ঘটনা নয়। এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা। ৫ আগস্টের পরাজিত শক্তিরাই বিভিন্ন কৌশলে তাদের বিষদাঁত বসানোর চেষ্টা করছে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন শক্তিগুলো ভিন্ন মতকে নির্মূল করতে চাইছে। তাই নুরুল হকের মতো জনমুখী নেতাদের হত্যা করার পরিকল্পনা করছে তারা।
চিকিৎসকদের উদ্ধৃতি
ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে রিজভী বলেন, নুরুল হকের অবস্থা এখনো পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত নয়। তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে কেবিনে কিংবা অন্য কোনো স্থানে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, প্রয়োজনে নুরুল হককে বিদেশে পাঠানোর কথাও বিবেচনা করতে হবে। “আমরা চাই, তার চিকিৎসা যেন সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন হয়। প্রয়োজনে বিদেশে পাঠাতে হবে।”
জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের দাবির প্রসঙ্গে
এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবির বিষয়ে বলেন,
> “এটি আমাদের দলের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে আমার ব্যক্তিগত মত হলো— ফ্যাসিবাদী শক্তি ও তাদের সহযোগীরা কখনোই দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাকে স্থিতিশীল হতে দেবে না। তাদের হাতে পাচার হওয়া বিপুল অর্থ আছে, যা দিয়ে তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করছে।”
নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি
রিজভী আহ্বান জানান, এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। “আমরা চাই, জনগণ সত্য জানতে পারুক। এমনকি প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তদন্ত করা হোক।”
হামলার নেপথ্যে কারা ছিল এবং এর পেছনে কারা অর্থায়ন করছে— সে বিষয়েও তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
ঘটনাটির পটভূমি
গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর থেকেই রাজধানীতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। নুরুল হক নুর বিভিন্ন সময় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় তার দলের কার্যালয়ে ঢুকে শনিবার রাতের এই হামলা চালানো হয়।
এতে নুরুল হক গুরুতর আহত হন এবং তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দেন এবং পর্যবেক্ষণে রাখেন।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর বিএনপি, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠন এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলছে, এটি শুধু নুরুল হকের ওপর হামলা নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে রুখে দেওয়ার প্রচেষ্টা।
বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলামসহ দলের আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা এ সময় রিজভীর সঙ্গে হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন।
Post a Comment