জনতার হাতে গণধোলাই খেয়ে পালালো ছিনতাইকারী।

নিজস্ব প্রতিবেদক
ভৈরব | ৮ আগস্ট ২০২৫

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে জুমার নামাজের সময় পথচারী ও স্থানীয়দের চোখ ফাঁকি দিয়ে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হলো না সুজন নামের এক যুবকের। জনতার ধাওয়া খেয়ে গণধোলাইয়ের শিকার হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত হাতে থাকা মোবাইল ফোন ফেলে পালাতে বাধ্য হয় সে। এ ঘটনায় তার সহযোগী জিসানও ধরা পড়তে গিয়েও কৌশলে পালিয়ে যায়।

ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার (৮ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকে বেলা দেড়টার মধ্যে, স্টেশন রোডের কবরস্থান মোড় এলাকায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাস্থল তখন বেশ শান্ত ছিল, কারণ আশপাশের মসজিদগুলোতে জুমার নামাজ চলছিল এবং রাস্তায় মানুষের ভিড় তুলনামূলক কম ছিল।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুজন ভৈরব পুর উত্তরপাড়ার ওয়াপদা হাটির বাসিন্দা কাশেম ড্রাইভারের ছেলে। তার সহযোগী জিসান একই এলাকার ছাবর আলী হাজীর বাড়ির মৃত মাইনুদ্দিনের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, এক রিকশা আরোহী স্টেশন রোড দিয়ে যাচ্ছিলেন। সুযোগ বুঝে সুজন হঠাৎ রিকশার গতিরোধ করে তাকে ধাক্কা দেয় এবং অকস্মাৎ আঘাত করে তার হাতে থাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এরপর দ্রুত পালানোর জন্য আগে থেকে প্রস্তুত রাখা সিএনজি অটোরিকশায় উঠে বসে।

তবে বিষয়টি চোখ এড়ায়নি কাছাকাছি থাকা কয়েকজন স্থানীয়ের। তারা প্রথমে চিৎকার করে আশপাশের মানুষকে সতর্ক করেন, পরে দ্রুত পিছু ধাওয়া শুরু করেন। এক পর্যায়ে কবরস্থান মোড়ের কাছেই ছিনতাইকারী সুজনকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে ফেলে কয়েকজন যুবক। মুহূর্তের মধ্যে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে তাকে গণধোলাই দেয়।

এ সময় আরেকজন অচেনা যুবক, পরে যার নাম জিসান বলে জানা যায়, ক্যাপ পরে সাধারণ পথচারীর অভিনয় করে সুজনকে ‘পাবলিকের হাত থেকে বাঁচানোর’ চেষ্টা চালায়। কিন্তু জনতার ক্ষোভ ঠেকানো সম্ভব হয়নি। ধোলাইয়ের একপর্যায়ে হাত থেকে ছিনতাই করা মোবাইল মাটিতে পড়ে যায়। সুযোগ বুঝে সুজন দ্রুত উঠে দৌড়ে পালিয়ে যায়। একইভাবে ভিড়ের মধ্যে গা ঢাকা দেয় জিসানও।

ঘটনার পরপরই খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও তখন ছিনতাইকারীরা উধাও। স্থানীয়দের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভৈরব শহরে সম্প্রতি এমন পথছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। বিশেষ করে দুপুরের সময় বা ভিড় কম থাকলে দুর্বৃত্তরা সুযোগ নেয়। তারা দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানি সাংবাদিকদের বলেন, “ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের টিম এলাকায় অভিযান শুরু করেছে। জড়িতদের আমরা চিহ্নিত করেছি। খুব শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”

ওসি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সুজন ও জিসান একই চক্রের সক্রিয় সদস্য, যারা শহরের বিভিন্ন এলাকায় সুযোগ বুঝে ছিনতাই করে থাকে। তাদের পূর্বের অপরাধের তথ্যও যাচাই করা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল কাদের বলেন, “এমন সময় ছিনতাই হয়েছে যখন মানুষ মসজিদে নামাজে ব্যস্ত। আল্লাহর রহমতে মোবাইলটা ফেরত পাওয়া গেছে, না হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির বড় ক্ষতি হতো।”

বড়রা বলছেন, শুধু পুলিশি টহল বাড়ানোই যথেষ্ট নয়; শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা জরুরি। এতে অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তার সহজ হবে।

এদিকে, প্রত্যক্ষদর্শীরা মনে করেন, জুমার নামাজের সময় বা ভোরে এমন ঘটনা ঘটলে অপরাধীরা সহজেই পালাতে পারে, কারণ তখন মানুষের চলাচল তুলনামূলক কম। তাই এসব সময়েও পুলিশি নজরদারি থাকা উচিত।

ভৈরবে পথছিনতাই নতুন কিছু নয়। তবে দিনের আলোয়, মানুষের সামনে এভাবে ছিনতাইয়ের চেষ্টা স্থানীয়দের উদ্বিগ্ন করেছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ঘটনাটি সবার জন্য সতর্কবার্তা—অপরাধীরা সময় ও সুযোগ পেলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় এবং জনসচেতনতার সমন্বয়ে এমন অপরাধ ঠেকানো সম্ভব বলে মনে করেন সচেতন মহল। আর এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণ হলো—জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে অপরাধী পালাতে বাধ্য হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post