ভৈরবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমজমাট পাখির হাট, প্রশাসনের নজরদারির ঘাটতি

ভৈরব বাজারে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন কার্যকর থাকলেও প্রতি সপ্তাহের হাটে নানা প্রজাতির পাখি প্রকাশ্যে কেনাবেচা হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতিতে এ হাটে প্রতিনিয়ত চলছে শালিক, টিয়া, বাজিগর, ঘুঘু, বকসহ নানা প্রজাতির পাখি বিক্রি-বাট্টা। প্রাণী সংরক্ষণ আইন প্রয়োগে প্রশাসনের ঢিলেঢালা অবস্থান পাখি ব্যবসায়ীদের সাহস বাড়িয়ে তুলেছে।

ভৈরবের সাপ্তাহিক হাটে গিয়ে দেখা যায়, রঙ-বেরঙের খাঁচায় বন্দি পাখিগুলোর কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত পুরো বাজার এলাকা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম হাটটি যেন এক বৈচিত্র্যময় পাখির মেলায় রূপ নিয়েছে। বাজারে বিক্রির জন্য আনা হয়েছে শোভাবর্ধনকারী ও কিছু বিরল প্রজাতির পাখিও।

পাখি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তারা গ্রামাঞ্চলের শিকারি বা শিশুদের কাছ থেকে কম দামে পাখি কিনে এনে হাটে বেশি দামে বিক্রি করেন। যেমন শালিক পাখি গ্রামের এক শিশুর কাছ থেকে ১৫০ টাকায় কিনে শহরের হাটে তা বিক্রি করা হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়। টিয়া, ময়না, বাজিগর, পানকৌড়ি, ঘুঘু, বকসহ বিভিন্ন জাতের পাখির দাম নির্ভর করছে আকৃতি ও চাহিদার ওপর। জোড়া টিয়া ৮০০ টাকা, ঘুঘু ৪৫০ টাকা, বক জোড়া ৩০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এমনকি ছোট আকারের কিছু পাখি মাত্র ১০০ টাকা জোড়া বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতাদের অনেকেই বলছেন, তারা শখের বশে পাখি কিনছেন। কেউ কেউ আবার উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নে পাখি কেনাবেচায় যুক্ত হচ্ছেন। যেমন বেলাব থানার নারায়ণপুর থেকে আসা বাবু মিয়া বলেন, “আমার বাড়িতে একটি বাজিগরের জোড়া আছে। আজ দুটো টিয়া পাখি কিনতে এসেছি। পাখি পালনে ভালো লাগে।”

অন্যদিকে ফেরিওয়ালা আবুল হোসেন জানান, “আমি গ্রাম থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি সংগ্রহ করে বিভিন্ন হাটে ফেরি করে বিক্রি করি। ছোট রঙিন পাখিগুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশি, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে।”

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এসব কার্যকলাপ পুরোপুরি আইনবিরোধী। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া পাখি পালন, কেনাবেচা বা প্রদর্শনের ওপর রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। এ আইন অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া পাখি পালনে এক বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আজহারুল ইসলাম বলেন, “ভৈরবে বেশ কয়েকটি দোকানে টিয়া, বাজিগর, লাপার্ড ও ময়নার মতো পাখি বিক্রি হয়। আমরা নিয়মিত এসব দোকানে তদারকি করি এবং বিক্রেতাদের নিরুৎসাহিত করি যেন তারা এ পাখিগুলো বিক্রি না করেন। পাখি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং কৃষির জন্যও উপকারী। পাখি নিধনের ফলে ফসলে কীটপতঙ্গের উপদ্রব বেড়ে যেতে পারে।”

তিনি আরও জানান, “পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সক্ষম এমন পাখিগুলোকেও আমরা বন্যপ্রাণী হিসেবে গণ্য করি। তাই এসব পাখি বিক্রয় ও প্রদর্শন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আগামী সপ্তাহে আমরা অভিযান চালিয়ে আইন বাস্তবায়ন করবো।”

স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, আইনি বাধা থাকা সত্ত্বেও বারবার পাখি বিক্রির হাট বসছে অথচ প্রশাসনের তেমন দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই। বাজারে পাখি কিনতে আসা লোকদের কেউ কেউ আইন সম্পর্কে জানলেও অনেকেই জানেন না। কেউ কেউ জানলেও তা আমলে নিচ্ছেন না।

পাখি কেনাবেচা বন্ধ না হলে শুধু আইন নয়, প্রকৃতির ভারসাম্যও বিপন্ন হবে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা। তাই দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

Post a Comment

Previous Post Next Post