মেয়েকে খুন করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে , করিমগঞ্জে বাবাসহ তিনজনের ফাঁসির আদেশ

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজের মেয়েকে হত্যার ঘটনায় বাবাসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। ৬ আগস্ট ২০২৫, বুধবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মুহাম্মদ নুরুল আমীন বিপ্লব এই রায় ঘোষণা করেন।

মামলার রায়ে তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন করিমগঞ্জ উপজেলার ভাটিয়া জহিরকোনা গ্রামের মৃত আ. মোতালিবের ছেলে মো. আনোয়ারুল ইসলাম ওরফে আঙ্গুর মিয়া (৭৩), তার ছোট ভাই খুরশিদ মিয়া (৫২) এবং ভাতিজা সাদেক মিয়া (৩৬)। এদের মধ্যে সাদেক মিয়া আঙ্গুর মিয়ার ছোট ভাই মেনু মিয়ার ছেলে। রায় ঘোষণার সময় তিন আসামিই পলাতক ছিলেন।

তবে একই মামলায় নিহত মীরার মা মোছা. নাজমুন্নাহারকে অভিযোগ থেকে খালাস দেন আদালত।

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট আঙ্গুর মিয়া, তার ভাই খুরশিদ এবং ভাতিজা সাদেক একত্র হয়ে আঙ্গুর মিয়ার নিজের মেয়ে মীরা আক্তারকে ছুরি দিয়ে বুকে আঘাত করে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ড সংঘটনের পর তারা প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে করিমগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। শুরুতে মামলাটি একটি সাধারণ হত্যাকাণ্ড হিসেবেই দেখা হচ্ছিল।

তবে পরে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া করিমগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অলক কুমার দত্ত তদন্তে বের করেন যে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, যার পেছনে উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক বা পারিবারিক প্রতিপক্ষকে ফাঁসানো। তদন্তে উঠে আসে, মেয়েকে নিজেই হত্যা করেছেন আঙ্গুর মিয়া ও তার সহযোগীরা। এরপর ২০১৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর এসআই অলক কুমার দত্ত নিজেই বাদী হয়ে নতুন একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যাতে মূল অভিযুক্ত হিসেবে চারজনকে আসামি করা হয়।

বহুদিন ধরে বিচার প্রক্রিয়া চলার পর অবশেষে আদালত এই রায় ঘোষণা করলেন। রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন না দণ্ডপ্রাপ্তরা। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন বলে জানা গেছে।

এই ঘটনার পর এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ এই নৃশংস ঘটনাকে পারিবারিক দেউলিয়াপনার উদাহরণ বলে আখ্যা দিচ্ছেন, কেউ বলছেন এটি বিচার ব্যবস্থার দৃঢ়তা ও ন্যায়বিচারের প্রতিফলন। মেয়েকে নিজ হাতে খুন করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর মতো নিষ্ঠুর ঘটনা সমাজে গভীর আলোড়ন তুলেছে।

এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন কিশোরগঞ্জ জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন।

এদিকে, দণ্ডপ্রাপ্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশের তৎপরতা আরও জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার ও দণ্ড কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন।

এটি ছিল এক নিষ্ঠুরতা ও প্রতারণার দৃষ্টান্ত যেখানে একজন বাবা, তার ভাই ও ভাতিজা নিজের মেয়েকে খুন করে সাজানো মামলা করতে চেয়েছিলেন। আদালতের রায় সমাজে এই বার্তাই দিয়েছে যে, অপরাধ যতই চতুরভাবে করা হোক না কেন, সত্য একদিন সামনে আসবেই, এবং অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি হবেই।

Post a Comment

Previous Post Next Post