কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে মসজিদের মাইকে ঘোষণা, সংঘর্ষে আহত ২৫

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় মোটরসাইকেল থেকে কাঁদা ছিটে পড়াকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া তিক্ততা দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে রূপ নেয়। স্থানীয় একটি মসজিদের মাইকে দেওয়া উস্কানিমূলক ঘোষণার প্রভাবে সংঘর্ষটি আরও ভয়াবহ রূপ নেয় এবং এতে অন্তত ২৫ জন নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার (১১ আগস্ট) সকালে উপজেলার কিরাটন ইউনিয়নের গৌরারগোপ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেলে গাবতলী বাজারগামী তাজুল ইসলামের (২৫) ওপর বিপরীত দিক থেকে আসা মাসুদ মিয়ার মোটরসাইকেল থেকে কাঁদা ছিটে পড়ে। এতে ক্ষুব্ধ তাজুল ধীরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলে মাসুদ ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে মারধর করেন। এই ছোট ঘটনা থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়।

ঘটনার তীব্রতা বাড়তে থাকলে সোমবার সকালে স্থানীয় মসজিদের মাইকে উস্কানিমূলক ঘোষণা দেওয়া হয়, যা দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। দেশীয় অস্ত্র হাতে হয়ে ওঠা এই সংঘর্ষে স্থানীয় জনগণ ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতে থাকে এবং এতে নারী-পুরুষ মিলিয়ে অন্তত ২৫ জন আহত হন।

করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব মোরশেদ জানান, "ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকায় শান্তি ফিরেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, দুই পক্ষের মধ্যকার দ্বন্দ্ব গত কয়েকদিন ধরে চলছিল, তবে মসজিদের মাইকে দেওয়া ঘোষণাই পরিস্থিতিকে উত্তেজিত করে তোলার মূল কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। তারা আশঙ্কা করছেন, এ ধরনের ঘটনা পুনরায় ঘটতে পারে, তাই প্রশাসনের কাছে কড়া নজরদারি ও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

আহতদের মধ্যে অনেকেই গুরুতর আহত হওয়ায় কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালসহ আশপাশের বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তি রয়েছেন। আহতদের পরিবার ও স্থানীয়রা প্রশাসনের তৎপরতা ও ন্যায়বিচারের আশ্বাস প্রত্যাশা করছেন।

এমন সংঘর্ষে স্থানীয় জনজীবন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। বাজার, স্কুলসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। প্রশাসন পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে। এছাড়া স্থানীয় লোকে শান্তির আহ্বান জানিয়ে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাড়তি উত্তেজনা সৃষ্টি হলে তা অনেক সময় বড় ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা রূপ নিতে পারে। তাই কমিউনিটি লেভেলে শান্তি-সম্প্রীতির বার্তা প্রচার ও সঠিক তথ্য পরিবেশন অত্যন্ত জরুরি। স্থানীয় প্রশাসন ও ধর্মীয় নেতাদেরও এতে বিশেষ ভূমিকা রাখা উচিত।

করিমগঞ্জের এই সংঘর্ষে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি এবং আশা করছি প্রশাসন যথাযথ তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ করবে যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়।

Post a Comment

Previous Post Next Post