বাজিতপুরে মাছের গাড়ি ছিনতাইয়ের অভিযোগে বিএনপি মনোনীত সাবেক এমপির ছেলে আটক

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলায় মাছের গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনায় কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনের বিএনপি মনোনীত সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান মুঞ্জুর ছেলে মফিজুর রহমান সুমনকে পুলিশ আটক করেছে। শনিবার (১০ আগস্ট) সকালে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাছচাষি আবু তাহের তার পাঙাশ মাছ ২০ ড্রাম ভর্তি করে টমটমে করে বাজারজাত করতে বাজিতপুর উপজেলার শাহরামপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মাছগুলো কটিয়াদীর চরিয়াকোনা এলাকার স্বনির্ভর বাজারে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। পথে যখন তিনি বাজিতপুর বাজারের কাছে বড় ব্রিজ অতিক্রম করছিলেন, তখন মফিজুর রহমান সুমন ও তার সহযোগীরা তাকে গতিরোধ করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে মাছ ভর্তি গাড়িটি জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়।

ঘটনার পর আবু তাহের দ্রুত অন্য একটি গাড়িতে করে স্বনির্ভর বাজারে পৌঁছান এবং তার মাছের গাড়ি সেখানে দেখতে পান। বিষয়টি স্থানীয় কটিয়াদী মডেল থানায় জানানোর পর পুলিশ তৎপর হয়ে অভিযান চালায়। পুলিশ উপপরিদর্শক (এসআই) মাজেদুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে মফিজুর রহমান সুমনকে আটক করে। তবে সুমনের সহযোগীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় এবং মাছের গাড়িটি উদ্ধার করা যায়নি।

আবু তাহের অভিযোগ করে বলেন, “আমার ২০ ড্রাম পাঙাশ মাছ জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। সুমনকে আটক করা হয়েছে, কিন্তু এখনো মাছ ফেরত পাইনি। আমার ব্যবসায় এতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।”

এই ঘটনায় জানতে চাইলে বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মনির বলেন, “মফিজুর রহমান সুমন বিএনপি বা এর কোনো অঙ্গসংগঠনের নেতা নয়। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই এবং সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করি।”

কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, “আটককৃত ব্যক্তি এবং অভিযোগকারী উভয়ই বাজিতপুর থানার অধিবাসী। সুমনকে বাজিতপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

বাজিতপুর থানার ওসি মুরাদ হোসেন জানান, “পুলিশ পর্যাপ্ত প্রমাণ সংগ্রহের মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা যাচাই করছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আমরা নিশ্চিত করব যেন দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

স্থানীয়রা বলছেন, সাম্প্রতিককালে এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি অবনতি ঘটেছে এবং এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রশাসনের আরো কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। তাদের দাবি, জনগণের সম্পদ ও ব্যবসা সংরক্ষণে যথাযথ নজরদারি চালানো উচিত।

এই ঘটনা কিশোরগঞ্জের ব্যবসায়ী মহল এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। মাছের ব্যবসায় আস্থা হারানো, আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি এলাকার ব্যবসায়িক পরিবেশের অবনতি আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞানী ও বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক পরিচয় ব্যতিরেকে ব্যক্তিগতভাবে কেউ অপরাধমূলক কাজ করলে তাকে আইনের আওতায় আনা উচিৎ। তবে রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধ পাঁসানোর প্রবণতা সমাজের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। তাই প্রশাসনের স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত অত্যন্ত জরুরি।

মফিজুর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা দায়েরের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করাই স্থানীয় জনগণের প্রত্যাশা।

Post a Comment

Previous Post Next Post