নিকলীতে বালু উত্তোলন নিয়ে সংঘর্ষে ২০ জন আহত

কিশোরগঞ্জের নিকলীতে অবৈধ বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও যুবদলের দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার নতুন বাজার এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। ঘটনার পর পুরো এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের তথ্যমতে, সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় গত রবিবার রাতের একটি অভিযানের পর থেকে। ওইদিন নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি হিসেবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রতীক দত্তের নেতৃত্বে একটি দল উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধ বালু উত্তোলন রোধে অভিযান চালায়। অভিযানের সময় বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে একজনকে আটক করা হয় এবং তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

এই অভিযানে প্রশাসনের সঙ্গে স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের কিছু নেতাকর্মীর কথাকাটাকাটি হয় বলে জানা গেছে। পরে অভিযুক্ত পক্ষ ও অভিযানের সমর্থক পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। মঙ্গলবার সকালে নতুন বাজার এলাকায় হঠাৎই দুই পক্ষের সমর্থকরা মুখোমুখি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সংঘর্ষে লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তাদেরকে নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বাজিতপুরের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিকলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় এখনো কোনো পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংঘর্ষের সঙ্গে কারা জড়িত এবং এর পেছনে মূল কারণ কী, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে, নিকলীতে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন দীর্ঘদিন ধরেই একটি সমস্যা। প্রশাসনের অভিযান হলেও কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি তা বন্ধ করতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় স্থানীয় রাজনীতির দ্বন্দ্বও জড়িয়ে পড়ে, যা প্রায়ই সংঘর্ষে রূপ নেয়।

নিকলীর নতুন বাজার এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করেছে। অনেক দোকানপাট সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়, পথচারীরাও নিরাপত্তার জন্য দ্রুত এলাকা ত্যাগ করেন। সংঘর্ষের পর পুলিশি টহল বৃদ্ধি পায় এবং বিকেলের পর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।

উল্লেখ্য, অবৈধ বালু উত্তোলন শুধু নদীর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং নদীর তীরবর্তী এলাকার ভাঙনও বাড়িয়ে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করলেও এই কার্যক্রম বন্ধে সুনির্দিষ্ট সমাধান দেখা যায়নি। নিকলীর ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, অবৈধ বালু ব্যবসা শুধু পরিবেশ নয়, সামাজিক অস্থিরতাও সৃষ্টি করছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post