নিজস্ব প্রতিবেদক, ভৈরব জয়নাল আবেদীন রিটন ॥
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ছিনতাই ও অপরাধের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনসাধারণের ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবাদের পর টনক নড়েছে পুলিশের। গত শনিবার বিকেলে শাড়ি ও চুড়ি হাতে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভকারীরা থানার ওসিকে তিন দিনের আলটিমেটাম দিলে, তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অভিযান চালিয়ে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবাদে তৎপরতা দেখায় পুলিশ
শনিবার বিকেলে ছিনতাইয়ের প্রতিবাদে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক মানুষ মিছিল করে থানার সামনে গিয়ে জড়ো হয়। তাদের হাতে ছিল শাড়ি, চুড়ি ও প্ল্যাকার্ড। বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, ভৈরব শহরে প্রতিনিয়ত ছিনতাই হচ্ছে, অথচ পুলিশ তা ঠেকাতে ব্যর্থ। তাই প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে থানার ওসিকে শাড়ি ও চুড়ি উপহার দিতে এসেছেন তারা।
এই ঘটনার পরপরই পুলিশ পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। থানা ও আশপাশের এলাকায় টহল বাড়ানো হয় এবং শনিবার রাত থেকেই অভিযান শুরু করে ভৈরব মডেল থানা পুলিশ।
২২ জন গ্রেপ্তার, আদালতে সোপর্দ
পুলিশ জানায়, ছিনতাই, মাদক, অস্ত্র ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ২২ জনকে আটক করা হয়। পরে যাচাই-বাছাই করে তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রবিবার আদালতে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন: হেলাল (২৫), রায়হান উদ্দিন (২০), সবুজ মিয়া (২৩), নাঈম (২৩), আরাফাত মিয়া (৩৩), ওসমান মিয়া (১৮), সোহেল মিয়া (২৮), ফুল মিয়া (৩৬), হৃদয় (২৫), রনি মিয়া (৩২), বিল্লাল মিয়া (২০), সানি মিয়া (৩৩), বিজয় (২৮), সুমন (২০), মাহিন মিয়া (২১), নামিন উদ্দিন (২০), মনির হোসেন (২৮), ফরহাদ মিয়া (২৫), আকাশ (৩২), গোলাম মোস্তফা (৪২), জনি মিয়া (২৬) ও দুলাল (৪৫)।
ওসির ভাষ্য: “ছিনতাই হচ্ছে, আবার ধরাও পড়ছে”
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানী বলেন, “ছিনতাইয়ের ঘটনা যেমন ঘটছে, আমরাও অভিযান চালিয়ে অপরাধীদের ধরছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তারা বেশিদিন জেলে থাকছে না। জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও অপরাধে জড়ায়। এতে আমাদের কঠোর পরিশ্রমের সুফল ম্লান হয়ে যাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “অপরাধ দমনে পুলিশের পাশাপাশি জনসাধারণের সহযোগিতা খুবই জরুরি। যেকোনো তথ্য পেলে আমাদের জানালে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
“চাইলে সব সম্ভব”— আন্দোলনকারীর প্রতিক্রিয়া
ছিনতাইবিরোধী সামাজিক আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা আজহারুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমরা ছিনতাইয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম, কিন্তু প্রশাসনের উদাসীনতায় অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আমাদের প্রতীকী প্রতিবাদে এখন পুলিশ যে তৎপরতা দেখিয়েছে, তা প্রমাণ করে চাইলে সব সম্ভব।”
সিসিটিভি এবং প্রশাসনের পদক্ষেপ
এদিকে ছিনতাই রোধে ভৈরব পৌরসভা সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিন। তিনি বলেন, “শহরের প্রধান সড়কগুলোতে সিসিটিভি বসানো হয়েছে। এছাড়া ছিনতাই প্রতিরোধে যৌথভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।”
আন্দোলনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, যদি প্রশাসনের এ উদ্যোগ ধারাবাহিক না থাকে কিংবা প্রত্যাশিত ফল না আসে, তাহলে আবারো কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। তাদের মতে, শহরজুড়ে এমন একটি নিরাপত্তাহীনতার পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে তা জনজীবনে গভীর প্রভাব ফেলবে।
Post a Comment