নিজস্ব প্রতিবেদক, কিশোরগঞ্জ ॥
সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বিতর্কিত দেশত্যাগের ঘটনার জেরে প্রায় তিন মাস আগে প্রত্যাহার হওয়া কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী আবারও আগের কর্মস্থলে ফিরছেন। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নতুন এক আদেশে তাকে কিশোরগঞ্জে পুনরায় যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রোববার (৩ আগস্ট) পুলিশ সদর দপ্তরের পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট-১ শাখা থেকে অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) খন্দকার শামীমা ইয়াছমিন স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশে এই নির্দেশ দেওয়া হয়।
আবদুল হামিদের দেশত্যাগ ও বিতর্ক
গত ৭ মে রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে করে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করেন বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ সদর থানায় দায়ের করা একটি মামলার প্রেক্ষিতে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকা উচিত ছিল—এমন অভিযোগে রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক। ফলে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে কিশোরগঞ্জের তৎকালীন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়।
তবে শুধুমাত্র কিশোরগঞ্জের এসপিই নয়, একই ঘটনায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন শাখায় দায়িত্ব পালনকারী একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার এবং দুইজন এসআই ও এএসআইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
দুটি তদন্ত কমিটির সুপারিশ: কর্মকর্তারা দায়মুক্ত
এ ঘটনা নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পুলিশ সদর দপ্তর, অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকেও আরেকটি তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে। দুই কমিটির তদন্তে উঠে আসে, সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনে কোনো অবহেলা করেননি এবং তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নেওয়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগুলো প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। সেই ধারাবাহিকতায় এসপি হাছান চৌধুরীকে পুনরায় কিশোরগঞ্জে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হলো।
এসপির বক্তব্য
পুনর্বহাল প্রসঙ্গে মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, “আমি কিশোরগঞ্জ স্টেশনেই আছি। নতুন করে আবার দায়িত্ব পালনে আমি সবার সহযোগিতা ও দোয়া চাই, যেন আগের মতোই সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যেতে পারি।”
তিনি আরও বলেন, “আমি সব সময় নিয়মনীতি মেনে দায়িত্ব পালন করে এসেছি। যেহেতু তদন্তে সত্য উদঘাটিত হয়েছে, তাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই।”
মামলার পটভূমি
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদসহ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়। অভিযোগে বলা হয়, ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও গুলির ঘটনায় তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।
পরে আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় প্রশ্ন ওঠে, কীভাবে মামলার এক নম্বর আসামি বিদেশ যেতে পারলেন, অথচ তার বিরুদ্ধে ইমিগ্রেশনে কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল না।
এই ইস্যুতে সরকারের একাধিক পর্যায় থেকে তদন্তের ঘোষণা আসে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, “দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি সহায়তাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে আমি নিজেই পদত্যাগ করব।”
রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রেক্ষাপট
এই ঘটনার সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ছিল উত্তেজনা ও চাপা ক্ষোভ। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ৯ মাস পর আবদুল হামিদের এই দেশত্যাগকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়। বিরোধীরা দাবি তোলে, তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে দেশত্যাগে সহায়তা করা হয়েছে।
তবে তদন্তে এসব অভিযোগের ভিত্তি পাওয়া যায়নি বলেই জানা গেছে। রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব বা প্রশাসনিক গাফিলতির অভিযোগের সুরাহা হওয়ায় প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা ফিরছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Post a Comment