কিশোরগঞ্জে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন মসজিদ ও মাজারের নিরাপত্তা জোরদারে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি কয়েকটি মাজারে হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে এসেছে। এসব বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয় আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে নিয়মিত আলোচনা হয়। মাজার ও মসজিদ কর্তৃপক্ষ যদি সিসি ক্যামেরা বসায়, তাহলে কোনো দুর্বৃত্ত হামলা চালালে সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যে এ ধরনের ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
রোববার (১০ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকাল ৯টায় সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া এলাকায় জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র পরিদর্শন করেন তিনি।
ড. খালিদ হোসেন বলেন, প্রতিটি মাজারে পুলিশ মোতায়েন করা সম্ভব নয়, কারণ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা সীমিত। তাই সামাজিক সচেতনতা ও স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা অপরিহার্য। মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা ও মাজারগুলো রক্ষায় সর্বস্তরের মানুষকে একযোগে কাজ করতে হবে। কেউ হামলা চালাতে চাইলে তাকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হবে।
তিনি আরও বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সবাইকে এসব ধর্মীয় স্থানের নিরাপত্তায় অংশ নিতে হবে। যদি স্থানীয়রা সক্রিয় ভূমিকা রাখে, তাহলে সন্ত্রাসী বা নাশকতাকারীদের কোনো সুযোগ থাকবে না। প্রযুক্তির ব্যবহার, বিশেষ করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কার্যকর উপায় হতে পারে।
পাগলা মসজিদের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা জানান, শিগগিরই ১০ তলা বিশিষ্ট একটি দৃষ্টিনন্দন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হবে। এখানে বহুমুখী কার্যক্রমের ব্যবস্থা থাকবে, যা আধুনিক তুরস্কের সুন্দরতম মসজিদগুলোর আদলে নির্মাণ করা হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে নির্বাচনের আগেই তিনি নিজ হাতে পাগলা মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
উপদেষ্টা বলেন, “এখানে ইতোমধ্যে অনেক কাজ এগিয়ে গেছে। আমরা চাই এই প্রকল্পটি দ্রুত শেষ হোক এবং দেশের অন্যতম আধুনিক ইসলামিক কমপ্লেক্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক।”
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। প্রতি শুক্রবার ও বিশেষ ধর্মীয় দিবসে এখানে হাজার হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। মসজিদের দানবাক্স খুললেই কোটি টাকার বেশি অনুদান জমা হওয়ার খবর সংবাদ শিরোনাম হয়। এই কারণে মসজিদটি শুধু ধর্মীয় দিক থেকে নয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
ধর্ম উপদেষ্টার বক্তব্য অনুযায়ী, দেশের অন্যান্য মসজিদ ও মাজারেও একই ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করা হলে ধর্মীয় স্থাপনাগুলোতে হামলা বা নাশকতার ঝুঁকি অনেক কমে যাবে। এছাড়া, স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাধারণ মানুষের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা সম্ভব।
তিনি আহ্বান জানান, ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা কেবল সরকারের দায়িত্ব নয়, বরং এটি সবার সম্মিলিত দায়িত্ব। তাই প্রত্যেককে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে কোনো অশুভ শক্তি এসব স্থানের পবিত্রতা বিনষ্ট করতে না পারে।
Post a Comment