কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভারতীয় নিষিদ্ধ কসমেটিক্স ও ওষুধ চোরাচালানের সময় হালিম মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে নৌ থানার পুলিশ। উদ্ধার হওয়া পণ্যের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় সাত লাখ ৯৬ হাজার টাকা। শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ভৈরবের জোড়া ব্রিজ এলাকার কাছ থেকে তাকে আটক করা হয়। আটককৃত হালিম সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ডলুরা গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নাফ মিয়ার ছেলে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নৌ থানার টহল পুলিশ নদীপথে অভিযানে যায়। ওই সময় তারা দেখতে পায় একটি নৌকায় বিপুল পরিমাণ ভারতীয় পণ্য আনা হচ্ছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে নৌকা থেকে তিনজন লোক নেমে পালানোর চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ হালিম মিয়াকে আটক করতে সক্ষম হলেও তার দুই সহযোগী এরশাদ ও মোস্তফা নদীপথ ব্যবহার করে পালিয়ে যায়।
নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ রাশেদুজ্জামান জানান, আটক হালিম মিয়ার নৌকা থেকে পাঁচ বস্তা ভারতীয় পণ্য উদ্ধার করা হয়। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কসমেটিক্স ও ভারতীয় কোম্পানির বিভিন্ন ওষুধ। এগুলো বাংলাদেশে আমদানি নিষিদ্ধ এবং অনুমোদনবিহীনভাবে বাজারজাত করা হয়। জব্দকৃত পণ্যের বাজারমূল্য আনুমানিক সাত লাখ ৯৬ হাজার টাকা বলে জানিয়েছেন তিনি।
ওসি রাশেদুজ্জামান আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে হালিম মিয়া স্বীকার করেছে যে তারা দীর্ঘদিন ধরে ভারত থেকে অবৈধভাবে এসব পণ্য নদীপথে এনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে আসছিল। এসব পণ্য সাধারণত সরকারি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিক্রি করা হয় এবং ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন এলাকার খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ী। এর ফলে একদিকে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে নিষিদ্ধ ওষুধ ও নিম্নমানের প্রসাধনী ব্যবহারে জনস্বাস্থ্যও ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
পুলিশ জানায়, আটক হালিম মিয়ার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া পালিয়ে যাওয়া এরশাদ ও মোস্তফাকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পুলিশের ধারণা, এই তিনজন একটি বড় চোরাকারবারি চক্রের সদস্য এবং তাদের মাধ্যমে এই চক্রের অন্যান্য সদস্যদেরও শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
স্থানীয়দের দাবি, ভৈরবের আশপাশের নদীপথ দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় পণ্যের অবৈধ চোরাচালানের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে কসমেটিক্স, ওষুধ, বিড়ি-সিগারেট, চা ও পানীয় দ্রব্যসহ নানা ধরনের পণ্য নদীপথে এনে ভেতরের বাজারে সরবরাহ করা হয়। এসব পণ্য অননুমোদিত হওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি বাজারে বৈধ পণ্যের প্রতিযোগিতা নষ্ট হচ্ছে।
অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, অবৈধভাবে ভারতীয় কসমেটিক্স ও ওষুধ আমদানি ও বিক্রির কারণে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। একইসঙ্গে এসব পণ্যের গুণগত মান যাচাই না করেই বাজারজাত হওয়ায় ভোক্তারা ঝুঁকির মুখে পড়ছেন।
ভৈরব নৌ থানার ওসি রাশেদুজ্জামান বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে নদীপথে অবৈধ পণ্য চোরাচালান বন্ধে অভিযান চালাচ্ছি। জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ক্ষতি রোধে এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, চোরাচালান রোধে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেউ অবৈধ পণ্য পরিবহন বা বিক্রির তথ্য পেলে দ্রুত থানায় জানালে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।
পুলিশের এই অভিযানের পর স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করছেন, এই ধরনের অভিযান নিয়মিত চালানো গেলে ভৈরব ও আশপাশের এলাকায় চোরাচালান অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আসবে।
Post a Comment