কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মাহফুজুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে জেলা বিএনপি। সিলেটে সংঘটিত একটি ডাকাতি মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়। শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মীর কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং গুরুতর অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পাকুন্দিয়া পৌর বিএনপির সুপারিশ ও জেলা বিএনপির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুসারে বহিষ্কারাদেশ কার্যকর করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। জেলা বিএনপির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন তারা মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে কোনো ধরনের সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাহফুজুর রহমান পাকুন্দিয়া পৌর সদরের বড়বাড়ি এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি একসময় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-তে কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি সিলেটে সংঘটিত একটি ডাকাতি ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। স্থানীয়দের দাবি, ডাকাতির ঘটনার সময় তিনি জনতার হাতে ধরা পড়েন এবং গণপিটুনির শিকার হন। পরে ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে একটি ডাকাতির মামলা দায়ের করা হয়। বিষয়টি দ্রুতই রাজনৈতিক অঙ্গন এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির নজরে আসে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই জেলা পর্যায় থেকে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পাকুন্দিয়া পৌর বিএনপির সভাপতি এসএম মিনহাজ উদ্দিন বলেন, দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়—এমন কোনো কর্মকাণ্ডে জড়ানো নেতাকর্মীদের জন্য বিএনপিতে জায়গা নেই। একজন পৌর সহ-সভাপতি হিসেবে মাহফুজুর রহমানের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে তিনি দলের নীতিমালা ভঙ্গ করেছেন। কেন্দ্রীয় ও জেলা বিএনপির নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা তাকে বহিষ্কারের সুপারিশ করি।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহল দীর্ঘদিন ধরে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। দলীয় সূত্র মতে, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যাতে দলের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ থাকে এবং জনগণের আস্থা বজায় থাকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সিলেটে সংঘটিত এ ধরনের ঘটনায় শুধু স্থানীয় রাজনীতি নয়, জাতীয় পর্যায়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে নির্বাচনের বছর বা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচির আগে দলের অভ্যন্তরে এমন বহিষ্কারাদেশ শৃঙ্খলা রক্ষার ইঙ্গিত দেয়।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা ডাকাতি মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে তাকে দণ্ডবিধি অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড ভোগ করতে হতে পারে। সেইসঙ্গে তার রাজনৈতিক জীবনও কার্যত শেষ হয়ে যেতে পারে। পাকুন্দিয়া থানার একটি সূত্র জানিয়েছে, মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্তের কাজ চলছে। পুলিশের দাবি, ঘটনার সত্যতা যাচাই ও প্রমাণ সংগ্রহের পরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পাকুন্দিয়া পৌর এলাকার সাধারণ মানুষ দলীয় এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, “রাজনৈতিক দলের নেতারা যদি অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, তবে সাধারণ মানুষ কীভাবে আস্থা রাখবে? এজন্য দলের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হয়েছে।” আরেক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, রাজনীতিতে অপরাধীদের ঠাঁই না দেওয়ার এই উদ্যোগ অন্যদের জন্যও সতর্কবার্তা হয়ে থাকবে।
পাকুন্দিয়া পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি মাহফুজুর রহমানের বহিষ্কার শুধু একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ নয়, বরং এটি দলের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা ও সচ্ছতা বজায় রাখার অংশ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়—ডাকাতি মামলার তদন্ত কোন পর্যায়ে যায় এবং এর চূড়ান্ত রায় কী হয়। তবে আপাতত বিএনপি স্পষ্ট করেছে, অপরাধে জড়িতদের প্রতি কোনো প্রকার সহনশীলতা দেখানো হবে না।
Post a Comment