গাজীপুরের সাংবাদিক তুহিন হত্যা: কিশোরগঞ্জে এজাহারভুক্ত আরেক আসামি গ্রেফতার

গাজীপুরে আলোচিত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আরেক আসামিকে কিশোরগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। শনিবার (৯ আগস্ট) বিকেলে জেলার ইটনা উপজেলার পুরাতন বাজার এলাকা থেকে র‌্যাব-১৪ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের একটি বিশেষ দল অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম শহিদুল ইসলাম। তিনি মামলার অন্যতম পলাতক আসামি এবং ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন বলে জানা গেছে। র‌্যাব-১৪ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের অধিনায়ক মো. আশরাফুল কবির গণমাধ্যমকে জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শহিদুল ইসলামের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে বিকেলে ইটনা সদরের পুরাতন বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।

তিনি আরও জানান, গ্রেফতারের পর শহিদুলকে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে নিয়ে আসা হচ্ছে। সন্ধ্যায় ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তার গ্রেফতারের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে। এ ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় পাঁচ-ছয়জন সশস্ত্র দুর্বৃত্ত হঠাৎ তুহিনকে লক্ষ্য করে ধাওয়া করে। জীবন বাঁচাতে তিনি নিকটবর্তী ঈদগাঁ মার্কেটের একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন। কিন্তু দুর্বৃত্তরা দোকানের ভেতরে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে নির্বিচারে কোপাতে থাকে। ঘটনাস্থলেই তুহিন গুরুতর জখম হন এবং পরে মৃত্যু হয়।

এলোপাতাড়ি হামলার এই দৃশ্য পাশের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত অভিযানে নামে এবং এ পর্যন্ত আটজনকে গ্রেফতার করেছে। শহিদুল ইসলামের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে মামলার প্রধান আসামিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যে আইনের আওতায় এসেছে।

নিহত আসাদুজ্জামান তুহিন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর ব্যুরোতে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি স্থানীয় নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডেও যুক্ত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে। সহকর্মী ও স্বজনদের মতে, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় বিভিন্ন সময় হুমকির মুখে পড়লেও তিনি সত্য প্রকাশে অটল ছিলেন।

এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক মহলে গভীর শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, একজন সাংবাদিককে এভাবে প্রকাশ্যে হত্যা শুধু ব্যক্তি নয়, গোটা সাংবাদিক সমাজ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর বড় আঘাত। অপরাধীদের দ্রুত বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তারা।

অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। প্রাথমিক তদন্তে ব্যক্তিগত শত্রুতা ও পূর্বের বিরোধের বিষয়টি সামনে এসেছে। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা বিস্তারিত জানাতে রাজি নন।

র‌্যাব ও পুলিশ যৌথভাবে মামলাটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে তদন্ত করছে। ঘটনার দিন রাতে থেকেই গাজীপুর ও আশপাশের জেলায় একাধিক স্থানে অভিযান চালানো হয়। সন্দেহভাজনদের গতিবিধি নজরে রাখতে গোয়েন্দা নজরদারি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।

এই মামলার অগ্রগতি নিয়ে সচেতন মহলের আগ্রহও প্রবল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুহিন হত্যার নিন্দা জানিয়ে ন্যায়বিচারের দাবিতে নানা পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও ঘটনাটিকে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছে।

মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি এবং সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ সম্পাদক ও সাংবাদিক নেতারা। তাদের মতে, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আশা করছে, বাকি আসামিদেরও দ্রুত গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সূত্র তাদের হাতে এসেছে এবং তদন্তের অগ্রগতি সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post