পাকুন্দিয়ায় অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনায় চালক খুন, দুই আসামি গ্রেপ্তার

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় চাঞ্চল্যকর অটোরিকশা ছিনতাই ও চালক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামির কাছ থেকে ছিনতাইকৃত অটোরিকশা বিক্রির নগদ টাকা এবং অপরাধে ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশি অভিযানে গ্রেপ্তার ও উদ্ধার

শনিবার (১৬ আগস্ট) ভোর রাতে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার উজান ভাটি এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে পাকুন্দিয়া থানা পুলিশের একটি টিম। প্রযুক্তির সহায়তায় ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের মৃত জসিম শেখের ছেলে হিরো শেখ (৪৫) এবং কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার আমাটিশিবপুর গ্রামের মৃত আফছার উদ্দিনের ছেলে মো. বিপ্লব (৪৫)।

পুলিশ জানায়, অভিযানে ছিনতাইকৃত অটোরিকশা বিক্রির নগদ ১৮ হাজার টাকা ও ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। তবে এখনো খোয়া যাওয়া অটোরিকশাটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

ওসির বক্তব্য

এ বিষয়ে পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, "ভুক্তভোগীর স্ত্রীর দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে আমরা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।"

ঘটনার পটভূমি

উল্লেখ্য, গত ৩ আগস্ট সকালে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বাগপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. সুলতান মিয়া (৬২) প্রতিদিনের মতো নিজের অটোরিকশা নিয়ে বের হন। দুপুর আনুমানিক দুইটার দিকে উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের বারান্দায় তাঁকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের সহায়তায় সুলতান মিয়াকে উদ্ধার করে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরদিন, ৪ আগস্ট, আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তবে পথেই তার মৃত্যু হয়।

হত্যা মামলা দায়ের

সুলতান মিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় তার স্ত্রী মোছা. মিনা ৮ আগস্ট পাকুন্দিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। এরপর থেকেই পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ড: অপরাধচক্রের যোগসূত্র

পুলিশ ধারণা করছে, এই হত্যাকাণ্ড একটি পূর্বপরিকল্পিত ছিনতাইয়ের অংশ। সন্দেহভাজনরা অটোরিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চালক সুলতান মিয়াকে নির্জনে ডেকে নিয়ে অজ্ঞান করে রেখে যায়, যার ফলে চিকিৎসা না পেয়ে তার মৃত্যু হয়। এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় অটোরিকশা ও মূল্যবান যানবাহন ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে পুলিশ মনে করছে।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয়রা এই ঘটনায় আতঙ্কিত এবং ক্ষুব্ধ। তারা দ্রুত বিচার এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। নিহত সুলতান মিয়া একজন সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন এবং দীর্ঘদিন ধরে অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

পুলিশের তদন্ত অব্যাহত

পাকুন্দিয়া থানা পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল দুটির মালিকানা যাচাই এবং আর্থিক লেনদেনের খোঁজখবরও নেওয়া হচ্ছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post