ভৈরবে ছিনতাইকারীকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন স্থানীয়রা

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ), ১৬ আগস্ট:
কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর এলাকার কবরস্থানের সামনে ছিনতাইয়ের সময় হাতে-নাতে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন স্থানীয় জনতা। অভিযুক্ত যুবক শাওন (২৫) ভৈরব শহরের চন্ডীবেড় মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং কবির আহমেদের ছেলে। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই সময় এক কিশোর ব্যাটারিচালিত একটি গাড়ির ব্যাটারি নিয়ে কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে শাওন তার গতিরোধ করে নিজেকে পুলিশের লোক পরিচয় দেয় এবং কিশোরটিকে মারধর করে তার ব্যাটারিটি ছিনিয়ে নেয়। এই ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই আরও দুই ব্যক্তির কাছ থেকেও একই কায়দায় সে মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নিজের পরিচয় গোপন রেখে বারবার ছিনতাই

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শাওন বেশ কিছুদিন ধরেই এলাকায় পুলিশ পরিচয়ে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছিল। তবে শনিবারের ঘটনার সময় সে কবরস্থানে কবর খোড়ার কাজে আসা লোকজনের নজরে পড়ে যায়। ভুক্তভোগীদের চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন এবং তাকে আটকে ফেলেন।

স্থানীয়রা জানান, ছিনতাইকারী শাওনের আচরণে সন্দেহ হলে তাকে ঘিরে রাখা হয়। পরে তার ব্যাগ তল্লাশি করে একটি ব্যাটারি পাওয়া যায়, যা কিছুক্ষণ আগেই কিশোরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে উত্তেজিত জনতা তাকে ঘিরে ফেলে এবং একপর্যায়ে গণধোলাই দিতে শুরু করে।

সাংবাদিক অফিসে আশ্রয়, এরপর পুলিশের হাতে সোপর্দ

জনতার ধাওয়ায় প্রাণভয়ে শাওন পাশের একটি সাংবাদিকের কার্যালয়ে আশ্রয় নেয়। পরে স্থানীয় সাংবাদিকরাই পুলিশকে খবর দেন। ভৈরব থানা পুলিশের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছিনতাইকারী শাওনকে নিজেদের হেফাজতে নেয়।

ঘটনার বিষয়ে ভৈরব থানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ছিনতাইয়ের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও ক্যামেরার সামনে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, শাওনের বিরুদ্ধে আগে থেকেই বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়দের প্রশংসা

এলাকাবাসীর সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করেছেন অনেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনার ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে জনমনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই মন্তব্য করেন, পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ বন্ধে জনসচেতনতার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও আরও সক্রিয় হতে হবে।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “পুলিশের নাম ব্যবহার করে এভাবে কেউ যদি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়, তাহলে মানুষ আর কার ওপর ভরসা রাখবে? আমরা সবাই মিলে বাধা না দিলে ছেলেটা হয়তো আজও পালিয়ে যেত।”

আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন

এ বিষয়ে ভৈরব থানার একটি সূত্র জানিয়েছে, আটক শাওনের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হবে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post