ট্রাকের ধাক্কায় দাদি ও নাতনির মৃত্যু: কিশোরগঞ্জে

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন এক দাদি ও তাঁর মাত্র আট মাস বয়সী নাতনি। শনিবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় রোগী দেখতে যাওয়ার পথে ট্রাকের ধাক্কায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে পথেই মৃত্যু হয় ছোট্ট মারিয়ার। একই রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দাদি ফরিদা আক্তার।
নিহত ফরিদা আক্তার (৬৫) উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের পূর্ব চারিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং মৃত আফতাব উদ্দিনের স্ত্রী। তাঁর নাতনি মারিয়া ছিলেন প্রবাসী মনির হোসেনের একমাত্র কন্যা। দাদির কোলে থাকা অবস্থায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন শিশুটি।

এ ঘটনায় মারিয়ার মা হাফসা আক্তার (২৬), বাবু মিয়া (৫৫), রিমা আক্তার (২৭), রুবেল মিয়া (২২) এবং রেনুয়ারা খাতুন (৪৫) আহত হন। তারা সবাই একই অটোরিকশায় ছিলেন এবং রোগী দেখতে যাচ্ছিলেন কুরিয়ারচর উপজেলার ডুমড়াকান্দা গ্রামে।

পরিবারের সদস্য রুবেল মিয়া জানান, তারা সন্ধ্যার দিকে আচমিতা থেকে রওনা হয়েছিলেন। স্বনির্ভর বাজার এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক বেপরোয়া গতিতে এসে তাদের সিএনজিচালিত অটোরিকশাটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে সবাই ছিটকে পড়েন এবং মুহূর্তেই গুরুতর আহত হন ফরিদা ও মারিয়া।

দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে বাজিতপুরের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর মারিয়া ও ফরিদাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পথে মারিয়া মারা যায়। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণ হারান দাদি ফরিদাও।

ঘটনার খবর পেয়ে কটিয়াদী হাইওয়ে থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ট্রাকটি জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়। তবে চালক পালিয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপ-পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল হোসেন। পুলিশ জানায়, ঘটনার তদন্ত চলছে এবং চালককে আটকের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে একসঙ্গে দুটি প্রাণ হারিয়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো পরিবারে। ফরিদা আক্তার ছিলেন এলাকার একজন অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন নারী, আর মারিয়া ছিল সবার প্রিয় মুখ। শিশু মারিয়ার এমন করুণ মৃত্যুতে এলাকাবাসীর চোখে জল, কেউই নিজেকে সামলে রাখতে পারছেন না।

প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ওই সড়কে প্রায়ই বেপরোয়া যান চলাচল দেখা যায়। কোনো স্পিড ব্রেকার না থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকেই। তারা জানান, এ ঘটনার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে ঝরে যাচ্ছে মূল্যবান জীবন। কিশোরগঞ্জের এই ঘটনাও সেই দীর্ঘ তালিকায় একটি নতুন সংযোজন মাত্র। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যথাযথ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলে এমন ঘটনা প্রতিদিনই ঘটবে এবং ভুক্তভোগীদের সংখ্যা আরও বাড়বে।

এই দুর্ঘটনা কেবল একটি পরিবারের দুঃখের গল্প নয়, বরং গোটা সমাজের জন্য একটি অশনি সংকেত। প্রয়োজন এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার—চালকদের সচেতনতা বৃদ্ধি, সড়কে কঠোর নজরদারি এবং আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা।

Post a Comment

Previous Post Next Post