ভৈরবে আওয়ামী লীগ নেতাদম্পতির বিরুদ্ধে ভূমি দখলের অভিযোগ, সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি | ১৪ আগস্ট ২০২৫
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় পর্যায়ের প্রবাসী নেতা ও তার স্ত্রী, যিনি স্থানীয় মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী, তাদের বিরুদ্ধে ভূমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টায় ভৈরব প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন স্থানীয় কমলপুর এলাকার বাসিন্দা মো. রফিকুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, তিনি ও তার দুই ভাই দীর্ঘদিন ধরে তাদের পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত ২০.৫০ শতক জমি ভোগদখল করে আসছিলেন। ভূমিটি সিএস ও আরএস রেকর্ডে তার বাপ-দাদার মালিকানায় এবং বিএস দাগেও তাদের তিন ভাইয়ের নামে নিবন্ধিত। কিন্তু সম্প্রতি ইতালি আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন এবং তার স্ত্রী ভৈরব মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী মোমেনা আক্তার নিলি ওই জমির মালিকানা দাবি করে জোরপূর্বক দখল শুরু করেন।
রফিকুলের অভিযোগ, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তারা উক্ত জমিতে জোর করে দেয়াল নির্মাণ করছেন, যদিও বিষয়টি নিয়ে কিশোরগঞ্জ আদালতে একটি মামলা এবং ভৈরব থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। থানার পুলিশ নিষেধাজ্ঞা দিলেও তারা আইন অমান্য করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগে আরও বলা হয়, জসিম উদ্দিনের সহযোগী হিসেবে স্থানীয় কয়েকজন চিহ্নিত ব্যক্তি—শাহাদাৎ, রুস্তম, চুন্নু ও বশির—ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দেয়াল নির্মাণে সহায়তা করছেন।
তিনি জানান, জসিম উদ্দিন মূলত ভৈরবের সম্ভুপুর এলাকার বাসিন্দা হলেও তার শ্বশুরবাড়ি কমলপুরে। প্রবাসে বসবাস করলেও দেশে এসে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে দখলবাজির ঘটনা ঘটাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন রফিকুল। তিনি দ্রুত এ অবস্থা থেকে প্রতিকার পেতে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
দ্বিতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কমলপুর এলাকার আরেক বাসিন্দা মো. সুমন জানান, তিনি জসিম উদ্দিনের শ্যালকের কাছ থেকে চার শতক জমি ক্রয় করেছেন। কিন্তু এই জমিও জসিম ও নিলি দখল করে দেয়াল নির্মাণ করছেন। পুলিশের বাধা সত্ত্বেও তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন সুমন। তিনি দাবি করেন, তাদের প্রভাব ও ক্ষমতার কারণে সাধারণ মানুষ ভয় পাচ্ছেন, যা স্থানীয় এলাকায় উত্তেজনা বাড়াচ্ছে।
আইন অমান্য ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ
অভিযোগকারীদের দাবি, জমি নিয়ে বিরোধ থাকলেও বিষয়টি আদালতে নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই প্রভাবশালী এই নেতাদম্পতি নিজের অবস্থান শক্ত করতে দখলকৃত জমিতে স্থায়ী কাঠামো গড়ে তুলছেন। এতে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অভিযোগকারীরা বলেন, জসিম ও তার স্ত্রী রাজনৈতিক পদে থেকে প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ মানুষের জমি দখলের চেষ্টা করছেন, যা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের আহ্বান
রফিকুল ইসলাম ও সুমন উভয়েই সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার আহ্বান জানান। তারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নিলে প্রভাবশালী হলেও কেউ অবৈধভাবে অন্যের জমি দখল করতে পারবে না।
স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা
ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাজনৈতিক পরিচয় কাজে লাগিয়ে এ ধরনের দখলবাজি চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়বে এবং সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। অনেকেই মনে করছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান না হলে এটি বড় ধরনের সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে।
অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি
সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকরা অভিযুক্ত জসিম উদ্দিন বা তার স্ত্রী মোমেনা আক্তার নিলির বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করলেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ফলে এ বিষয়ে তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ভূমি দখল নিয়ে ভৈরবের এই ঘটনাটি বর্তমানে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এখন দেখার বিষয়—প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে অভিযোগগুলোর তদন্ত করে এবং সমস্যার সমাধান করে।
Post a Comment