ফজলুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি কিশোরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী নেতাদের

কিশোরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্যকে ‘কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর’ আখ্যা দিয়ে তাকে অবিলম্বে দলীয় পদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন। তারা সতর্ক করে বলেছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই বক্তব্য প্রত্যাহার না করা হলে কিশোরগঞ্জে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হবে এবং নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে ‘বিপ্লবী ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা শাখার সাবেক আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক রাতুল নাহিদ ভূঁইয়া ও সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্সসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বক্তব্য প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অভিযোগ করেন, ফজলুর রহমান সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে গণঅভ্যুত্থান অস্বীকার করে আন্দোলনকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়েছেন এবং নানা মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন। তারা বলেন, “এ ধরনের অপমানজনক মন্তব্য কেবল আন্দোলনকারীদের নয়, বরং বিএনপির শহীদ ও আহত নেতাকর্মীদের মর্যাদাকেও ক্ষুণ্ন করছে।”

নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “২৪ ঘণ্টার মধ্যে বক্তব্য প্রত্যাহার না করা হলে কিশোরগঞ্জে ফজলুর রহমানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে। একইসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, যেন অবিলম্বে তাকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।”

তারা আরও সতর্ক করেন, যদি বিএনপি এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে পরবর্তী যেকোনো গণ-আন্দোলন বা প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে সৃষ্ট পরিস্থিতির দায়ভার দলকেই নিতে হবে।

সারজিস আলমের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদ

সংবাদ সম্মেলনে নেতারা এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাকে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ বলে দাবি করেন। তারা মামলাটি প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়ে বলেন, “এ ধরনের হয়রানিমূলক মামলা ভবিষ্যতে আরও নেতাদের বিরুদ্ধে হতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা বসে থাকব না, আবার রাজপথে নেমে প্রতিবাদ জানাব।”

রাজপথে ফেরার ঘোষণা

বক্তারা বলেন, “আমরা এখনও আন্দোলনের মঞ্চ ছাড়িনি। যদি আমাদের হয়রানি করা হয় বা আমাদের আন্দোলনকে অস্বীকার করা হয়, তবে আবার রাজপথে নেমে রক্ত দিতে প্রস্তুত আছি।”

তারা অভিযোগ করেন, ফজলুর রহমানের মন্তব্যে শুধু আন্দোলনকারীরাই নন, বরং বিএনপির পক্ষ থেকে শহীদ ও আহত শতাধিক নেতাকর্মীর প্রতি অবমাননা করা হয়েছে।

টকশো থেকে শুরু বিতর্ক

উল্লেখযোগ্য যে, সম্প্রতি একটি টেলিভিশন টকশোতে এনসিপি নেতাদের নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন ফজলুর রহমান। এতে তিনি নাহিদ ইসলামসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে ‘অশালীন গালি’ দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এই মন্তব্যের পর এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

সারজিস আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়ায় লেখেন, “ফজলুর রহমান নাহিদ ইসলামসহ আমাদের নেতাদের ‘বেজন্মা’ গালি দিয়েছেন। তিনি এখন আওয়ামী লীগের ভাষা ও বয়ান ব্যবহার করছেন, যা খুনি লীগের মিডিয়া সেলগুলো প্রচার করছে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “বিএনপির সিনিয়র নেতাদের আমরা সম্মান করি, কিন্তু যারা ন্যূনতম রাজনৈতিক শিষ্টাচার মানে না, গণঅভ্যুত্থানকে অস্বীকার করে এবং আওয়ামীবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়, তাদের কারণে ছাত্র-জনতার ক্ষোভ বাড়ছে। বিএনপি যদি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তবে জনগণ ধরে নেবে দলই এসব বক্তব্য অনুমোদন করছে।”

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন

সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র মানস সরকার উৎস, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ইয়াজ ইবনে জসিম, যুগ্ম সদস্য সচিব শামসুর রহমান, সদস্য আরিফুল ইসলাম রাফি, তামিম ইকবাল, মিয়াদ ও দেলোয়ার নেওয়াজ ভূঁইয়াসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফজলুর রহমানের এই মন্তব্য কিশোরগঞ্জ ও কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নতুন বিরোধের জন্ম দিতে পারে। ইতোমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও তীব্র করতে পারে।

বৈষম্যবিরোধী নেতারা জানিয়েছেন, তারা বিএনপির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। তবে দাবি মানা না হলে রাজপথে নামা তাদের জন্য ‘অপরিহার্য’ হয়ে উঠবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post