কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলায় সরকারি বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে একই বিদ্যালয়ের দপ্তরি兼নৈশপ্রহরীর বিরুদ্ধে। কামড় ও প্রাণনাশের হুমকির মতো গুরুতর ঘটনার পর স্থানীয় শিক্ষা মহলে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার শিকার হয়েছেন কটিয়াদির চান্দপুর বড়বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিরাজ কিশোর দেবনাথ।
ঘটনাটি ঘটেছে ১৬ জুলাই (বুধবার) বিকেল ৪টার দিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে। ঘটনার সময় কক্ষে আরও দুইজন সহকারী শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগ অনুযায়ী, দপ্তরি兼নৈশপ্রহরী মনির খানকে অফিস কক্ষে থাকা একটি প্রিন্টার নির্দিষ্ট স্থানে সরিয়ে রাখতে বলা হলে তিনি তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন। উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে শিক্ষককে বাঁ হাতে কামড়ে রক্তাক্ত করেন এবং পরে ধারালো কুন্তি দিয়ে আঘাত করার হুমকি দেন।
ঘটনার পরে গুরুতর আহত অবস্থায় শিক্ষক বিরাজ কিশোর দেবনাথ কটিয়াদি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ১৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) কটিয়াদি উপজেলা শিক্ষা অফিস এবং কটিয়াদি থানায় পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
প্রধান শিক্ষক বিরাজ কিশোর দেবনাথ গণমাধ্যমকে জানান, "দপ্তরি মনির খান দায়িত্ব পালনে আগ্রহী নন, অনেকদিন ধরেই আমি তার দায়িত্বহীন আচরণ লক্ষ্য করে আসছি। বুধবার আমি তাকে শুধু বলেছিলাম প্রিন্টারটি ঠিক জায়গায় রাখতে। এতেই সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং হঠাৎ আমার বাঁ হাত কামড়ে দেয়। এরপর একটি কুন্তি নিয়ে এসে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। আমি নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।"
অভিযুক্ত মনির খান ঘটনার সত্যতা অস্বীকার না করে বলেন, “প্রধান শিক্ষক বরাবরই খিটখিটে মেজাজের। ঘটনার সময় তিনি আমাকে অপমানজনক ভাষায় তিরস্কার করেন ও টেনে ধরে বসিয়ে রাখেন। বাধ্য হয়ে আমি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য তার হাত কামড় দিয়েছি। বিষয়টি আমি দুঃখজনক মনে করি, তবে তা আত্মরক্ষার জন্যই করেছি।”
এ বিষয়ে কটিয়াদি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, “প্রধান শিক্ষক আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি। বৃহস্পতিবারই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক কমিটি বসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে। প্রাথমিকভাবে কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে এবং আগামী রোববার অভিযুক্ত মনির খানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এদিকে, কটিয়াদি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু সাঈদ ইকবাল ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “একজন শিক্ষককে কর্মস্থলে দপ্তরি কর্তৃক কামড়ে রক্তাক্ত করা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও লজ্জাজনক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এরকম ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা দ্রুত বিচার দাবি করছি।”
এ ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের মধ্যেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি একজন প্রধান শিক্ষকই নিরাপদ না থাকেন, তাহলে সেখানে ছাত্রছাত্রীদের সুরক্ষা কতটুকু নিশ্চিত করা সম্ভব—তা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।
ঘটনার পরপরই কটিয়াদি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, “আমরা প্রধান শিক্ষকের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে এবং ঘটনার সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এ ধরনের ঘটনা শুধু শিক্ষাব্যবস্থার জন্য নয়, সমাজের নৈতিক কাঠামোর জন্যও হুমকি স্বরূপ। যেখানে বিদ্যালয়কে বিবেচনা করা হয় জ্ঞান, মূল্যবোধ ও শৃঙ্খলার স্থান হিসেবে, সেখানে কর্মরতদের মধ্যেই যদি এমন হিংসাত্মক আচরণ দেখা যায়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে তা ভয়াবহ বার্তা বহন করে। শিক্ষাবিদ ও প্রশাসনের দায়িত্ব এখন এমন অপ্রীতিকর ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
Post a Comment